Saturday, November 16, 2019

ছোট্ট একটি তাসবিহ কিন্তু সাওয়াব-ফজিলত অনেক বেশি।

উম্মত জননী হজরত জুওয়াইরিয়া (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন আল্লাহর নবী (সা.) ফজরের সময় আমার ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। তখন আমি জায়নামাজে ছিলাম। তিনি চাশতের সময় আমার ঘরে ফিরে এলেন। তখনও আমি জায়নামাজে ছিলাম। 
তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘জুওয়াইরিয়া! আমি যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এভাবেই ওজিফা আদায়ে মশগুল ছিলে? আমি বললাম, হ্যাঁ। 
তিনি আমাকে বললেন, আমি তোমার পরে চারটি বাক্য তিনবার বলেছি। যদি এগুলোকে ওজন করা হয় তবে তোমার কৃত সমস্ত ওজিফার চেয়ে এগুলোই বেশি ভারি হবে। আর তা হলো- .
.
ﺳُﺒْﺤَﺎ/ﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺑِﺤَﻤْﺪِﻩِ ﻋَﺪَﺩَ ﺧَﻠْﻘِﻪِ ﻭَﺭِﺿَﺎ ﻧَﻔْﺴِﻪِ ﻭَﺯِﻧَﺔَ ﻋَﺮْﺷِﻪِ .ﻭَﻣِﺪَﺍﺩَ ﻛَﻠِﻤَﺎﺗِﻪِ
.
.
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালকিহি ওয়া- রিজা নাফসিহি ওয়া জিনাতা আরশিহি ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি। -সহিহ মুসলিম শরিফ : ৭০৮৮ .
.
অর্থ: আমি আল্লাহতায়ালার প্রশংসাসমেত পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তার সৃষ্টিকুলের সংখ্যার পরিমাণ, তিনি সন্তুষ্ট হওয়া পরিমাণ, তার আরশের ওজন সমপরিমাণ, তার কথা লিপিবদ্ধ করার কালি পরিমাণ।

Friday, November 15, 2019

সহজ ১০টি জিকির, যার প্রতিদান সরাসরি জান্নাত ।

পানি ছাড়া যেমন প্রাণ বাঁচে না, তেমনই আল্লাহ তায়ালার যিকির ছাড়া মানবমনের খোরাক সঞ্চয় হয় না। তাই যিকিরের ফযিলত অনেক এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ আল্লাহ পবিত্র কেরআনে এরশাদ করেন।

ألاَ بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْب (سورة رعد
অর্থ:-তোমরা সকলে শুনে জেনে রাখ যে, একমাত্র আল্লাহর যিকির ব্যতীত আত্মার শান্তি আর কিছুতেই নাই। একমাত্র আল্লাহর পবিত্র নামের যিকির জপাতেই আত্মার শান্তি লাভ হয়।

 আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন:
فَاذْكُرُوْنِيْ أَذْكُرْكُمْ (سورة بقرة
অর্থ: তোমরা আমার যিকির করো (আমাকে স্মরণ রেখো) তা হলে আমিও তোমাদেরকে স্মরণ রাখব।
যারা আল্লাহর আশেক, তারা জানে যে, প্রাণপ্রিয়কে স্মরণ রাখার কত মূল্য! কত স্বাদ! সারা পৃথিবীর সোনা-রূপা, হীরা-জওয়াহেরাত, মণি-মুক্তা, চুনি-পান্নারও সে মূল্য নাই। বেহেশতের হূর-গিলমান, হাওযে কাওসার আর সোনার বাগানেরও সে মূল্য নাই, যা শুধু প্রাণপ্রিয় যিকিরের মধ্যে আছে।

তাই আল্লাহ পাক বলেছেন:
وَبَشّرِ الْمُخْبِتِيْنَ الَّذِيْنَ إِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ
অর্থ: যারা নম্রতা ও ভক্তি সহকারে আল্লাহর আদেশ পালন করতে থাকে এবং আল্লাহর নাম শ্রবণ করা মাত্রই যাদের প্রাণ কেপে উঠে তাদেরকে আপনি সুসংবাদ প্রদান করুন।

আল্লাহ তায়ালা আবার বলছেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اذْكُرُوا اللهَ ذِكْرًا كَثِيْرًا وَسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَأَصِيْلا
অর্থ:-হে মু-মিনগণ! তোমরা আল্লাহর যিকির বেশী করে কর এবং সকাল-বিকাল (দিবা-রাত্র) তার পবিত্রতা ঘোষণা করতে থাক।


এছাড়াও পবিত্র কোরআনে আল্লাহর যিকির সম্পর্কে আনেক আয়াত বিদ্যমান আছে।


যে সহজ (১০ দশটি) যিকির প্রতিদিন পাঠ করলে মৃত্যুর পর জান্নাত। তবে হ্যা আগে '''নামাজ'', সেটা তো সবাই জানেনই। ইসলামের মূল যে ৫ ভিত্তি, সেগুলা যেনো আমাদের হেলায় না যায়। যে সহজ (১০ দশটি) আযকার যিকির প্রতিদিন করলে মৃত্যুর পর জান্নাত ।

(১) প্রতিদিন ১০০ বার সুবহান আল্লাহ্ পাঠ করলে ১০০০ সাওয়াব লিখা হয় এবং ১০০০ গুনাহ মাফ করা হয়। [সহীহ মুসলিম-৪/২০৭৩] 

(২) ‘আলহামদুলিল্লাহ’ মীযানের পাল্লাকে ভারী করে দেয় এবং সর্বোত্তম দোআ’। [তিরমিযী-৫/৪৬২,ইবনে মাযাহ-২/১২৪৯,হাকিম-১/ ৫০৩,সহীহ আল জামে’-১/৩৬২] 

(৩) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সর্বোত্তম যিকর। [তিরমিযী-৫/৪৬২,ইবনে মাযাহ-২/১২৪৯,হাকিম-১/ ৫০৩,সহীহ আল জামে’-১/৩৬২] 

(৪) ‘সুবহান আল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর’ এই কালিমাগুলি আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় এবং নবী (সঃ) বলেনঃ পৃথিবীর সমস্ত জিনিসের চইতে আমার নিকট অধিক প্রিয়। [ সহীহ মুসলিম -৩/১৬৮৫, ৪/২০৭২] 

(৫) যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’ প্রতিদিন ১০০ বার পাঠ করবে সমুদ্রের ফেনা পরিমান (সগীরা) গুনাহ থাকলে ও তাকে মাফ করে দেওয়া হবে। [সহীহ আল-বুখারী-৭/১৬৮,সহীহ মুসলিম-৪/২০৭১] 

(৬) নবী (সা.) বলেন, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বি –হামদিহী সুবহানাল্লাহিল আযীম’ এই কালীমাগুলি জিহ্বায় উচ্চারনে সহজ, মীযানের পাল্লায় ভারী, দয়াময় আল্লাহর নিকট প্রিয় । [সহিহ আল- বুখারী-৭/ ১৬৮,সহীহ মুসলিম-৪/২০৭২] 

(৭) যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহিল আযীমি ওয়াবি হামদিহী’ পাঠ করবে প্রতিবারে তার জন্য জান্নাতে একটি করে (জান্নাতী) খেজুর গাছ রোপন করা হবে । [আত-তিরমিযী-৫/৫১১,আল-হাকীম-১/৫০১, সহীহ আল-জামে’-৫/৫৩১, সহীহ আত-তিরমিজী-৩/১৬০] 

(৮) নবী (সা.) বলেন, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ হচ্ছে জান্নাতের গুপ্তধন সমুহের মধ্যে একটি গুপ্তধন। [ সহীহ আল-বুখারী -১১/২১৩, সহীহ মুসলিম-৪/২০৭৬] 

(৯) নবী (সা.) বলেন, ‘সুবহান আল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ এই কালীমাগুলি হচ্ছে “অবশিষ্ট নেকআ’মল সমুহ”। [ আহমাদ (সহীহ)-৫১৩, মাজমাউজ জাওয়াঈদ-১/২৯৭ ] 

(১০) নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দুরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তাআ’লা তার প্রতি দশ বার রহমত বরষন করবেন- “আল্লাহুম্মা সাল্লি ’আলা মুহাম্মাদিঁওয়া ’আলা আলি মুহাম্মাদিন্ কামা সাল্লায়তা ’আলা ইব্রাহীমা ওয়া ’আলা ’আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজিদ আল্লাহুম্মা বারিক ’আলা মুহাম্মাদিঁওয়া ’আলা আলি মুহাম্মাদিন্ কামা বারাকতা ’আলা ইব্রাহীমা ওয়া ’আলা ’আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজিদ" এবং তিনি (সা.) আরো বলেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি সকালে দশবার এবং বিকেলে দশবার দুরুদ পাঠ করবে সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত পাবে ।” [তাবারানী, মাজময়াউজ জাওয়াঈদ-১০/১২০, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব-১/২৭৩]


যে কোন জিকির ছোট হোক অথবা বড় হোক, ফজিলত কিন্তু ছোট নয়, সব জিকিরেরই ফজিলত বড়।আর উপরে এক এক জিকিরের এক ফজিলত দেয়া আছে।এক জিকিরের সব ফজিলত হাদিসে নেই।কিন্তু এক জিকিরের ফজিলত অসীম।তাই ফজিলত একটা দেখে জিকিরকে কম মূল্যবান মনে করবেন না।সময় বের করে সব জিকির পড়ার চেষ্টা করবেন।লম্বা করে এক সঙ্গে পড়তে না পরলে ছোট ছোট করে পড়বেন।

Sunday, October 13, 2019

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উপকারিতা।।

মানুষের দেহ চলমান। সুস্থতার জন্য নড়া-চড়া, হাঁটা-চলা ও ওঠা-বসা দরকার। ৫ ওয়াক্ত সালাতে মসজিদে যাওয়া-আসা করতে হয়। নামাজে ওঠা-বসা করতে হয়। এ সবই উপকারী। ৫ ওয়াক্ত সালাতের জন্য ৫টি সময় রয়েছে। এছাড়াও সুন্নত ও নফল নামাজের সময় রয়েছে। এ সময়গুলোর চিকিৎসা বিজ্ঞানগত উপকারিতা রয়েছে।
ফজরের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞান: 
ফজরের সময় নামাজ আদায় করলে সারা রাত ঘুমের পর হালকা অনুশীলন হয়ে যায়। এ সময় পাকস্থলী খালি থাকে তাই কঠিন অনুশীলন শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এ সময়ে নামাজ আদায় করলে নামাজি অবসাদগ্রস্ততা ও অচলতা থেকে মুক্তি পায়। মস্তিষ্ক ফ্রি হয়ে পুনরায় চিন্তা করার জন্য প্রস্তুত হয়। এ সময়ে নামাজি হেঁটে মসজিদে যায় আর আত্মা পরিচ্ছন্ন, প্রশান্ত পরিবেশ থেকে সূক্ষ্ম অনুভূতি লাভ করে- এসবই উপকারী। এ সময়ে দেহ পরিষ্কার হয়। দাঁত পরিষ্কার, অঙ্গ ধোয়া ও পেশাব-পায়খানা থেকে পবিত্রতা অর্জন হয়ে যায়। এতে জীবাণুর আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। ডা. মাহমুদ চুগতাই বলেন, অন্ত্ররোগ ও আলসার থেকেও বাঁচা যায়। রোমের পাদরি হিলার বলেন, ভোরের নামাজের জন্য ওঠা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাশ্চর্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। (প্রার্থনা গ্রন্থ)
জোহরের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞান: 
মানুষ জীবিকার জন্য দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন কাজ করে। এতে ধুলা, ময়লা, বিষাক্ত কেমিকেল শরীরে লাগে। দেহে জীবাণু আক্রমণ করে। ওজু করলে এসব দূর হয় এবং ক্লান্তি দূর হয়ে দেহ পুনর্জীবন লাভ করে। গরমের কারণে সূর্য ঢলে পড়ার সময় বিষাক্ত গ্যাস বের হয়। এ গ্যাস মানবদেহে প্রভাব ফেললে মস্তিষ্ক, পাগলামিসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে। এ সময় ওজু করে নামাজ আদায় করলে এ গ্যাস প্রভাব ফেলতে পারে না ফলে দেহ বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচে যায়। এ সময় আল্লাহ নামাজ ফরয করে আমাদের জন্য অনুগ্রহ করেছেন।
আসরের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞান: 
পৃথিবী দুই ধরনের গতিতে চলে। লম্ব ও বৃত্তীয়। যখন সূর্য ঢলতে থাকে তখন পৃথিবীর ঘূর্ণন কমতে থাকে। এমনকি আসরের সময় একেবারেই কমে যায়। এ সময় রাতের অনুভূতি প্রবল হতে থাকে। প্রকৃতির মধ্যে স্থবিরতা এবং অবসাদগ্রস্ততা প্রদর্শিত হতে থাকে। আসরের নামাজের সময় অবচেতন অনুভূতির শুরু হয়। এ সময় নামাজ আদায় করলে অতিরিক্ত অবসাদগ্রস্ততা, অবচেতন অনুভূতির আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। মানসিক চাপ ও অস্থিরতা কমে। নূরানি রশ্মি নামাজিকে প্রশান্তি দান করে।
মাগরিবের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞান: 
সারাদিন মানুষ জীবিকার জন্য শ্রম ও কষ্টের মধ্যে কাটায়। মাগরিবের সময় ওজু করে নামাজ আদায়ের ফলে আত্মিক ও দৈহিক প্রশান্তি লাভ হয়। এ সময় নামাজ আদায়ে পরিবারের বাচ্চারাও অংশ গ্রহণ করতে পারে। এতে বাচ্চারা অনুগত, পুণ্যশীল হয়। এ সময় পরিবারের মধ্যে আনন্দের রেশ বয়ে যায়।
এশার সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞান: 
মানুষ কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে রাতে খাবার খায়। এ সময় খেয়ে শুয়ে পড়লে বিভিন্ন রোগ হতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, অল্প ব্যায়াম করে বিছানায় গেলে কোনো সমস্যা হবে না। এশার নামাজ ব্যায়ামের চেয়েও বেশি উপযোগী। এ নামাজ আদায়ে শান্তি পাওয়া যায়, খাদ্য হজম হয় এবং অস্থিরতা দূর হয়।
তাহাজ্জুদের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞান: 
এ সময়ে নামাজ আদায় করা অস্বস্তি, নিদ্রাহীনতা, হার্ট, স্নায়ুর সংকোচন ও বন্ধন এবং মাথার বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা। ডা. মাহমুদ চুগতাই বলেন, যারা দূরের জিনিস দেখে না এ সময়ে নামাজ আদায় করা তাদের চিকিৎসা। এছাড়াও এ সময়ে নামাজ আদায় করলে বুদ্ধি, আনন্দ এবং অসাধারণ শক্তির সৃষ্টি হয় যা নামাজিকে সারাদিন উৎফুল্ল রাখে।

নামাজের শারীরিক উপকারিতা


নামাজ ফরজ ইবাদাত। আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন সব মুসলমানের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে ফরজ করেছেন। এ নামাজ পরকালের মুক্তি লাভের অন্যতম মাধ্যম। কারণ পরকালে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে। যে ব্যক্তি নামাজের হিসাব সুন্দরভাবে দিতে পারবে, তার পরবর্তী হিসাব সহজ হয়ে যাবে।

আবার নামাজ দুনিয়ায় সব ধরনের অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। শুধু তাই নয়, নামাজের মাধ্যমে নামাজি ব্যক্তি অনেক শারীরিক উপকার লাভ করে। যার কিছু তুলে ধরা হলো-

দাঁড়ানো
মানুষ যখন নামাজে দাঁড়ায়; তখন সব চোখ সিজদার স্থানে স্থির থাকে। ফলে মানুষের একাগ্রতা ও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

রুকু
নামাজি ব্যক্তি যখন রুকু করে এবং রুকু থেকে ওঠে সোজা হয়ে দাঁড়ায় তখন মানুষের কোমর ও হাঁটুর ভারসাম্য রক্ষা হয়। রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে কোমর ও হাটু ব্যাথা উপশম হয়।

সিজদা
নামাজে যখন সিজদা করা হয় তখন নামাজি ব্যক্তির মস্তিস্কে দ্রুত রক্ত প্রবাহিত হয়। ফলে তার স্মৃতি শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আবার সিজদা থেকে ওঠে যখন দুই সিজদার মাঝখানে বসে এতে তার পায়ের উরু ও হাঁট সংকোচন এবং প্রসরণ ঘটে। এতে করে মানুষের হাঁটু ও কোমরের ব্যথা উপশম হয়।

ওঠা বসা
নামাজের সময় নামাজি ব্যক্তিকে দাঁড়ানো, রুকুতে যাওয়া, রুকু থেকে ওঠে সোজা হয়ে স্থির দাঁড়ানো, আবার সিজদায় যাওয়া, সিজদা থেকে ওঠে স্থিরভাবে বসা, আবার সিজদা দিয়ে দাঁড়ানো বা বসা। এ সবই মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যায়াম। এতে মানুষের শারীরিক বহুবিদ উপকার সাধিত হয়।

মানসিকতার পরিবর্তন
নামাজের মাধ্যমে মানুষের মন ও মানসিকতায় অসাধারণ পরিবর্তন আসে। গোনাহ, ভয়, নীচুতা, হতাশা, অস্থিরতা, পেরেশানি ইত্যাদি দূরভীত হয়। ফলে বিশুদ্ধ মন নিয়ে সব কাজে সম্পৃক্ত হওয়া যায়।

দেহের কাঠামোগত উন্নতি
নামাজ মানুষের দেহের কাঠামোগত ভারসাম্যতা বজায় রাখে। ফলে স্থুলতা ও বিকলঙ্গতা হার কমে যায়। মানুষ যখন নামাজে নড়াচড়া করে তখন অঙ্গগুলো স্থানভেদে সংবর্ধিত, সংকুচিত হয়ে বিশেষ কাজ করে থাকে। অঙ্গ ও জোড়াগুলোর বর্ধন ও উন্নতি এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়।

পরিচ্ছন্ন রাখে
নামাজের জন্য মানুষকে প্রতিদিন পাঁচবার অজু করতে হয়। আর এতে মানুষের ত্বক পরিষ্কার থাকে। ওজুর সময় মানুষের দেহের মূল্যবান অংশগুলো পরিষ্কার হয় য দ্বারা বিভিন্ন প্রকার জীবানু হতে মানুষ সুরক্ষিত থাকি।

চেহারার লাবন্যতা বৃদ্ধি
নামাজের জন্য মানুষ যতবার অজু করে, ততবারই মানুষের মুখমণ্ডল ম্যাসেস হয়ে থাকে। যাতে মুখমণ্ডলে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। ফলে মানুষের চেহারার লাবন্যতা বৃদ্ধি পায়, মুখের বলিরেখা ও মুখের দাগ কমে যায়।

বিশেষ করে…
নামাজ মানুষের মানসিক, স্নায়ুবিক, মনস্তাত্ত্বিক, অস্থিরতা, হতাশা-দুশ্চিন্তা, হার্ট অ্যাটাক, হাড়ের জোড়ার ব্যাথা, ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ, পাকস্থলীর আলসার, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস মেলিটাস,  চোখ এবং গলা ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

হার্টের রোগীদের প্রতিদিন বাধ্যতামূলকভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা উচিত,নামাজ মানুষকে সব সময় সতেজ রাখে, অলসতা এবং অবসাদগ্রস্ততাকে শরীরে বাড়তে দেয় না।

পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মের মধ্যে নামাজের মতো এমন সামগ্রিক ইবাদত আর নেই। নামাজির জন্য এটা একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে, এটা একান্তই সামগ্রিক ব্যায়াম। যার প্রভাব মানুষের সব অঙ্গগুলোতে পড়ে এবং মানুষের প্রতিটি অঙ্গ নড়াচড়ার ফলে শক্তি সৃষ্টি হয় এবং সুস্বাস্থ্য অটুট থাকে।

পরিশেষে...
নামাজের উপকারিতায় আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।’ শুধু তাই নয়, নামাজ মানুষের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক পবিত্রতা সাধনের অনন্য হাতিয়ার।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সময়মতো নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। নামাজ আদায়ের মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক উপকারিতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ফজরের নামাজের ১০ উপকারিতা

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, 
أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الصَّلاةُ ، فَإِنْ صَلَحَتْ صَلَحَ لَهُ سَائِرُ عَمَلِهِ ، وَإِنْ فَسَدَتْ فَسَدَ سَائِرُ عَمَلِهِ
কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব হবে। যদি নামাজ ঠিক হয় তবে তার সকল আমল সঠিক বিবেচিত হবে। আর যদি নামাজ বিনষ্ট হয় তবে তার সকল আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে। (তাবরানি ১৯২৯)

মূলত নামাজ এমন ইবাদত যা সারা বছর দৈনিক পাঁচ বার আদায় করতে হয়। মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অবস্থাতেই নামাজ মাফ হয় না। এমনকি মৃত্যুশয্যাতেও নামাজ হতে বিরত থাকার কোনো বিধান নেই।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজর নামাজের গুরুত্ব আরো বেশি। হাদিসে এর এত বেশি গুরুত্ব এসেছে যে, যদি একজন মুমিন তন্মধ্য থেকে মাত্র একটিও মনে রাখে তাহলেও এক্ষেত্রে তার গাফলতি অনায়াসে দূর হয়ে যাবে। তার হিম্মত বেড়ে যাবে। ঘুম ও অলসতা কাটিয়ে ওঠতে সক্ষম হবে। নব প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে সে ফজরের জামাতে শরিক হওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টায় ব্রতী হবে—ইনশা আল্লাহ।

এ লক্ষে ফজরের নামাজ আদায়ে বিশেষ ১০ টি উপকারী দিক পাঠকের জন্য নিচে তুলে ধরা হলো।

১. ফজরের নামাজে দাঁড়ানো, সারা রাত দাঁড়িয়ে নামায পড়ার সমান। 
উসমান ইবন আফফান রাযি. থেকে 
বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, 
مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ ، وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّهُ

যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ঈশার নামাজ আদায় করলো, সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়লো। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পড়লো, সে যেন পুরো রাত জেগে নামাজ পড়লো। (মুসলিম ১০৯৬)

২. ওই দিনের পুরোটা আল্লাহর জিম্মায় থাকার দুর্লভ সৌভাগ্য। 
ফজরের নামাজ পড়লেই শুধু এ-ঈর্ষণীয় সৌভাগ্য লাভ করা যাবে। যুনদব ইবন আব্দুল্লাহ ইবন সুফইয়ান আলবাজালি রাযি. বলেন, 
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, 
مَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فَهُوَ فِي ذِمَّةِ اللَّهِ فَلَا يُتْبِعَنَّكُمُ اللَّهُ بِشَيْءٍ مِنْ ذِمَّتِهِ

যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করল, সে আল্লাহর জিম্মায় চলে গেল। অতএব আল্লাহ যেন তার জিম্মার বিষয়ে তোমাদেরকে কোনোরূপ অভিযুক্ত না করেন। (তিরমিযি ২১৮৪)

৩. ফজরের নামাজ কেয়ামতের দিন নূর হয়ে দেখা দেবে।
 বুরাইদা আলআসলামি রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, 
بَشِّرِ الْمَشَّائِينَ فِي الظُّلَمِ إِلَى الْمَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
যারা আঁধারে (ফজর নামাযে) মসজিদের দিকে হেঁটে যায়, তাদের কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূর প্রাপ্তির সুসংবাদ দাও। (আবু দাউদ ৪৯৪)

৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত প্রাপ্তির সুসংবাদ। আবূ যুহাইর ‘উমারাহ ইবনে রুআইবাহ রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ -কে বলতে শুনেছি যে,
لَنْ يَلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلَّى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا» يعني: الفَجْرَ والعَصْرَ
যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (অর্থাৎ ফজরের ও আসরের নামাজ) আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। (মুসলিম ৬৩৪, নাসায়ি ৪৭১, ৪৮৭, আবু দাউদ ৪২৭, আহমদ ১৬৭৬৯, ১৭৮৩৩)

৫.মুনাফেকি থেকে মুক্তি পাবে। আবূ হুরাইরা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  বলেছেন, 
لَيْسَ صَلاَةٌ أَثْقَلَ عَلَى المُنَافِقِينَ مِنْ صَلاَةِ الفَجْرِ وَالعِشَاءِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْواً
মুনাফিকদের উপর ফজর ও এশার নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারী নামাজ আর নেই। যদি তারা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছার ভরে অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হত। (বুখারি ৬৫৭, ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪, মুসলিম ৬৫১)

৬. সরাসরি আল্লাহর দরবারে নিজের নাম আলোচিত হবে। আবূ হুরাইরা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  বলেছেন,
يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلاَئِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلاَئِكَةٌ بِالنَّهَارِ ، وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلاَةِ الفَجْرِ وَصَلاَةِ العَصْرِ ، ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ ، فَيَسْأَلُهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ : كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي ؟ فَيَقُولُونَ : تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ ، وَأَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ
তোমাদের কাছে পালাক্রমে দিনে ও রাতে ফেরেশতারা আসে। তারা আসর ও ফজরের সময় একত্রিত হয়। যারা রাতের কর্তব্যে ছিল তারা ওপরে উঠে যায়। আল্লাহ তো সব জানেন, তবুও ফিরিশতাদেরকে প্রশ্ন করেন, আমার বান্দাদেরকে কেমন রেখে এলে? ফেরেশতারা বলে, আমরা তাদেরকে নামাজরত রেখে এসেছি। যখন গিয়েছিলাম, তখনো তারা নামাজরত ছিল। (বুখারি ৫৪০)

৭. দুনিয়া আখেরাতের সেরা বস্তু অর্জিত হয়ে যাবে। আয়েশা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  বলেছেন,
رَكْعَتَا الْفَجْرِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا
ফজরের দুই রাকাত দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে, সবকিছুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ। (মুসলিম ১২৪০)

৮. পরিপূর্ণ এক হজ্জ ও ওমরার সওয়াব পাবে, যদি সে সূর্য ওঠা পর্যন্ত আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকে। আনাস ইবন মালিক রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  বলেছেন,
مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ ، كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ ، وَعُمْرَةٍ ، تَامَّةٍ ، تَامَّةٍ ، تَامَّةٍ
যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ফজরের নামাজ আদায়ান্তে বসে আল্লাহর যিকিরে মশগুল থেকে সূর্য উদয় হওয়ার পর দুই রাকাত নফল নামাজ (ইশরাক) আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ এক হজ্জ ও ওমরার সওয়াব পাবে। ‘পরিপূর্ণ’ এ শব্দটি তিনি তিনবার বলেছেন। (তিরমিযি ৫৮৬)

৯. তুলনাহীন গণিমত লাভ করবে। উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ  নাজদের দিকে এক অভিযানে একটি সেনাদল পাঠান। তারা প্রচুর গণিমতের সম্পদ অর্জন করে এবং তাড়াতাড়ি ফিরে আসে। তাদের সাথে যায় নি এমন এক লোক বলল, অল্প সময়ের মধ্যে এত পরিমাণে উত্তম গণিমত নিয়ে এদের চেয়ে তাড়াতাড়ি আর কোন সেনাদলকে আমরা ফিরে আসতে দেখি নি। তখন রাসূলুল্লাহ  বলেন,
أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى قَوْمٍ أَفْضَلُ غَنِيمَةً وَأَسْرَعُ رَجْعَةً ؟ قَوْمٌ شَهِدُوا صَلَاةَ الصُّبْحِ ثُمَّ جَلَسُوا يَذْكُرُونَ اللَّهَ حَتَّى طَلَعَتِ الشَّمْسُ فَأُولَئِكَ أَسْرَعُ رَجْعَةً وَأَفْضَلُ غَنِيمَةً
আমি কি তোমাদেরকে এমন এক দলের কথা বলব না যারা এদের চেয়ে তাড়াতাড়ি উত্তম গণিমত নিয়ে ফিরে আসে? যারা ফজরের নামাজের জামা’আতে হাযির হয়, (নামাজ শেষে) সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহ্ তা’আলার যিকির করতে থাকে, তারাই অল্প সময়ের মধ্যে উত্তম গণিমতসহ প্রত্যাবর্তনকারী। (তিরমিযি ৩৬৪১)

১০. কেয়ামতের দিন সরাসরি আল্লাহকে দেখার সৌভাগ্য লাভ। আর এটি হচ্ছে সর্বোত্তম পুরস্কার। জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ আল বাজলী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ -এর কাছে ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন,
أَمَا إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا، لاَ تُضَامُّونَ ـ أَوْ لاَ تُضَاهُونَ ـ فِي رُؤْيَتِهِ، فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لاَ تُغْلَبُوا عَلَى صَلاَةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ، وَقَبْلَ غُرُوبِهَا فَافْعَلُوا ‏”‏‏.‏ ثُمَّ قَالَ ‏”‏ فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا
শোন! নিশ্চয় তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে তেমনি স্পষ্ট দেখতে পাবে, যেমন স্পষ্ট ঐ চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে তোমরা কোনো ভিড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই তোমরা যদি সূর্য উঠার আগের নামাজ ও সূর্য ডুবার আগের নামাজ আদায়ে সমর্থ হও, তাহলে তাই কর। তারপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন, “সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবীহ্ পাঠ করুন।” (বুখারি ৫৭৩)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথা নিয়মে জামাআতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে উল্লেখিত ফজিলত, মর্যাদা ও উপকারিতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।


নামায আদায়কারীর পুরস্কার ও উপকারিতা


আখেরাতের পুরুস্কার
উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রা. বলেন: নবী করীম সা. এর এ রকম অভ্যাস ছিল যে, তিনি যখন ঘরে তাশরীফ আনতেন কোন লৌকিকতা ছাড়াই ঘরবাসীদের সাথে প্রাণ খুলে কথাবার্তা বলতেন। কিন্তু মুয়াজ্জিনের আজান শোনা মাত্রই তিনি এরূপ ব্যাকুল হয়ে উঠতেন যে, সাথে সাথে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ করে দিতেন এবং নামাযের প্রস্তুতি নিতেন। তখন তাঁর অবস্থা দেখে মনে হত, আমরা যেন তাঁর নিকট সম্পূর্ণ অপরিচিত।
এর কারণ এই ছিল যে, আল্লাহ তায়া’লা এবং তাঁর বান্দার মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র সূত্র হচ্ছে নামায; সুতরাং এই নামাযের জন্য স্ত্রী-পুত্র তো বটেই এমনকি সমগ্র দুনিয়া এবং দুনিয়ায় যা কিছু আছে তার সবকিছু বিনষ্ট হলে ও কিছু আসে যায় না। মহান রাব্বুল আলামীন নামাযী বান্দাদের জন্য কি পুরস্কার রেখেছেন সে সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের কয়েকটি উদ্ধৃতি নিম্নে পেশ করা হল।

১. মহান আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন ঃ
الذين يقيمون الصلوة ومما رزقنهم ينفقون- اولئك هم المومنون حقا- لهم درجت عند ربهم ومغفرة ورزق كريم-
‘‘যারা নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে ব্যয় করে। তারা হল সত্যিকার ঈমানদার। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক। [ সূরা আনফাল-৩-৪]

২. আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন:
والذين هم على صلوتهم يحافظون- اولئك هم الورثون- الذين يرثون الفردوس هم فيها خلدون-
‘‘আর যারা তাদের নামায সমূহের হিফাযত করে তারাই হবে অধিকারী। অধিকারী হবে জান্নাতুল ফেরদাউসের তাতে চিরকাল থাকবে। [সূরা মুমিনুন -৯ -১১]

৩. হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহ তায়া’লা বলেন ঃ
আমি আপনার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছি এবং আমি আমার নিজের সাথে অঙ্গীকার করেছি যে, যে ব্যক্তি যথা সময়ে নামায সমূহের পূর্ণ হিফাযত করবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে নামায সমূহের হিফাযত করবে না, তার জন্য আমার কাছে কোন অঙ্গীকার নেই। [আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ]

৪. একবার রাসুলুল্লাহ সা. সাহাবীদের জিজ্ঞাসা করলেনঃ যদি তোমাদের মধ্যে কারো ঘরের পাশ দিয়ে কোন নদী প্রবাহিত হয় যার মধ্যে সে দৈনিক পাঁচ বার গোসল করে, তাহলে বল, তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে কি? সাহাবীগণ আরয করলেন না, তার শরীরে কোন ময়লাই থাকবেনা। নবী করীম সা. বললেন, এরূপ হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দৃষ্টান্ত। আল্লাহ তা’য়ালা এসব নামাযের মাধ্যমে তার গুনাহগুলো মিটিয়ে দেবেন। [বুখারী, মুসলিম]

৫. হযরত আবুযার রা. বর্ণনা করেনঃ একবার শীতের সময় যখন গাছের পাতা ঝরে পড়ছিল, নবী করীম সা. বাইরে তাশরীফ আনলেন এবং গাছের দু’টি ডাল ধরে ঝাঁকি দেয়া শুরু করলেন এবং ঝরঝর করে (শুকনো) পাতা পড়তে লাগল। তখন নবী সা. বললেন, হে আবুযার! যখন কোন মুসলমান একনিষ্ঠ হয়ে আন্তরিকতার সাথে নামায পড়ে, তার গুনাহ সমূহ ঠিক এভাবে ঝরে পড়ে যেমন এ গাছের পাতাগুলো ঝরে পড়ছে। [মুসনাদে আহমদ]

৬. বান্দার চারটি আমল নিয়ে ফেরেশতারা পরস্পরে বলাবলি করে। আমল সমূহ নিম্নরূপ ঃ
* নামাযের পর মসজিদে বসে আল্লাহর জিকির করা।
* এক নামায শেষ করে পরবর্তী নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকা।
* জামায়া’তে নামায পড়ার আশায় পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া।
* এবং অসুস্থ অবস্থায় শীতের কষ্ট উপেক্ষা করেও পরিপূর্ণ অযু করা। এ চারটি কাজের মাধ্যমে নামাযী ব্যক্তি সুখে-শান্তিতে বাস করবে এবং নেককার বান্দা হয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হবে। আর সে সদ্যজাত শিশুর মত নিষ্পাপ হবে। [ মিশকাত]

৭. হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি ধীরস্থিরভাবে পরিপূর্ণ আদবের সাথে যথা নিয়মে নামায আদায় করবে আল্লাহ্ তায়া’লা তাকে পাঁচটি পুরস্কার দ্বারা সম্মানিত করবেন।
* তার রিজিক ও জীবিকার যাবতীয় কষ্ট দূর করে দিবেন।
* তার কোন কবর আযাব হবেনা।
* কিয়ামতের দিন আমলনামা তার ডান হাতে প্রদান করা হবে।
* সে বিদ্যুতগতিতে পুলসিরাত পার হতে পারবে।
* সে বিনা হিসেবে আনন্দের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [ফাজায়েলে নামাজ]

৮. হাদীস শরীফে আছে যে ব্যক্তি নামায পড়ে মসজিদ হতে বের হয়, কিন্তু পরবর্তী নামাযে শরীক না হওয়া পর্যন্ত তার অন্তঃকরণ মসজিদের দিকেই থাকে এবং সে যথাসময়ে নামায সম্পন্ন করে সে ব্যক্তি কিয়ামতের কঠিন দিবসে আল্লাহ্র আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবে। [মিশকাত]

৯. রাসূলে কারীম সা. বলেছেন ঃ তোমরা সর্বদা গুনাহর আগুনে জ্বলতেছ। তোমরা যখন ফজরের নামায আদায় কর, তখন উহা নিভে যায়। ফজর হতে জোহর পর্যন্ত আবার পাপের আগুনে জ্বলতে থাক। যখন জোহরের নামায শেষ কর তখন উহা নিভে যায়। পুনরায় জোহর হতে আসর পর্যন্ত আগুন জ্বালিয়ে তার মধ্যে পোড়ার যাবতীয় ব্যবস্থা করতে থাক; কিন্তু আসরের নামায সমাপ্ত করার সংগে সংগে উহা নিভে শীতল হয়ে যায়। আবার আসর হতে মাগরিব পর্যন্ত সময় উহা এমনভাবে জ্বলে উঠে যে, উহার শিখা তোমাদেরকে ছাই করে ফেলতে চায়। কিন্তু মাগরিবের নামায আদায় করা মাত্রই উহা নির্বাপিত হয়ে যায়। তারপর ই’শা পর্যন্ত তোমাদের পাপের আগুন আবার তীব্রভাবে জ্বলতে থাকে এবং যখন তোমরা ই’শার নামায সম্পন্ন কর, তখন উহা সম্পূর্ণরূপেই নিভে যায়। তখন তোমরা সম্পূর্ণ নিষ্পাপ হয়ে ঘুমিয়ে থাক। ঘুম ভাংগা পর্যন্ত তোমাদের আমল নামায় আর কোন প্রকার গুনাহ লিখা হয়না। [তারগীব ও তারহীব]

 সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ নামাযের পুরস্কার

১. ফজরের সুন্নাত ঃ আয়েশা রা. হতে বর্ণিতঃ নবী করীম সা. বলেছেন, ফজরের দু’রাকাআ’ত সুন্নাত সমস্ত দুনিয়া ও উহার মধ্যবর্তী সকল নিয়ামত হতে উত্তম। [মুসলিম]

২. জোহরের সুন্নাত ঃ উম্মে হাবীবা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি জোহরের (ফরযের) পূর্বে চার রাকআ’ত এবং পরে দু’রাকআ’ত সুন্নাত যথারীতি আদায় করে আল্লাহ তায়া’লা তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন। [তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ]

৩. আসরের সুন্নাত ঃ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি আসরের (ফরযের) পূর্বে চার রাকাআ’ত সুন্নাত পড়ে আল্লাহ্ তার প্রতি রহম করেন। [আবু দাউদ, তিরমিযী, আহমদ]
* হুজুর সা. আসরের সুন্নাত কখনো কখনো দু’রাকাআ’ত পড়েতন।

৪. মাগরিবের সুন্নাত ঃ যে ব্যক্তি মাগরিবের (ফরযের) পর দু’রাকাআ’ত স্ন্নুাত পড়ে তার সে নামায উপরস্থ ইল্লিয়ীনে পৌঁছানো হয়। [আবু দাউদ]

৫. ই’শার সুন্নাত ঃ যে ব্যক্তি দিনরাত ১২ রাকাআ’ত নামায পড়বে। তার জন্য বেহেশতে ঘর নির্মান করা হবে। চার রাকআ’ত জোহরের পূর্বে, দু’রাকআ’ত জোহরের পরে, দু’রাকাআ’ত মাগরিবের পরে, দু’রাকাআ’ত ই’শার পরে এবং দু’রাকাআ’ত ফজরের পূর্বে। [বায়হাকী]

Wednesday, September 18, 2019

গীবত কাকে বলে ?

গীবত শব্দটি ইসমে মাছদর অভিধানে বিভিন্ন অর্থে ব্যাবহৃত হয়।
১. পরনিন্দা করা,২. কুৎসা রটনা করা,৩. গোপনে সমালোচনা করা
৪. দোষ বর্ননা করা।

কারো অনুপস্থিতে অন্যের কাছে এমন দোষ বর্ননা করা যা সে শুনলে খারাপ লাগে, অপছন্দ করে বা অসন্তুষ্ট হয় তাকেই গীবত বলে। চাই মুখে হোক আর লেখনীতে হউক। কোন মুসলমানের নিকট হউক আর অমুসলিমের নিকট হউক। বর্ণিত দোষ যদি ঐ ব্যক্তির মধ্যে থাকে তবে তা গীবত হবে।আর যদি না থাকে মিথ্যা বানিয়ে বর্ণনা করা হয় তাহলে তা হবে অপবাদ।

রাসুলুল্লাহ (সঃ) একদিন সাহাবায়ে কেরামদের জিজ্ঞেস করলেন তোমরা জান গীবত কাকে বলে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন আল্লাহ ও তার রাসুল (সঃ) ভাল জানেন জবাবে রাসুল (সঃ) ইরশাদ করলেন ‘‘জিকরুকা আখাকা বিমা ইয়াক্রাহু” গীবত হচ্ছে তোমার অপর ভাইয়ের এমন দোষ বর্ণনা করা যা সে শুনলে অসন্তুষ্ট হবে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ বর্ণনাকৃত দোষ যদি তাহার মাঝে থাকে তবে কি গীবত হবে। রাসুল (সঃ) বললেন- যার দোষ বর্ণনা করা হবে তাহার মাঝে যদি এ দোষ বিদ্যমান থাকে তবে তা গীবত হবে আর যদি না থাকে তবে অপবাদ হবে। (মুসলিম)

আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালামে এরশাদ করেন ‘‘ওলা ইয়াখতাব বা’য়দুকুম বা’য়দা’’
–তোমরা একে অপরের গীবত করোনা ।
আবার অনেকে মৃতদের দোষ বর্ণনা করে তাও হারাম। কারন রাসুল (সঃ) বলেছেন-তোমাদের কেউ মারা গেলে তাকে ছেড়ে দাও। তার গীবত করনা। তিনি আরো বলেছেন-তোমরা মৃতদের সদগুন সমুহ আলোচনা কর এবং মন্দ আলোচনা থেকে বিরত থাক।

গীবত শুনা:
কারো গীবত শুনে চুপ থেকে প্রতিবাদ না করা কানের গীবত । কেননা গীবত শুনে চুপ থাকা এবং প্রতিবাদ না করা নিজেই গীবত করার শামিল।

কারন রাসুল (সঃ) বলেছেন- যখন কারো গীবত করা হয় আর তুমি সে মজলিসে বসা থাক তখন তুমি গীবতকৃত ব্যক্তির সাহয্যকারী হও। এভাবে, তুমি তার প্রশংসা শুরু করে দাও যাতে মানুষ তার গীবত হতে বিরত হয় এবং গীবতকারীকে গীবত করা হতে নিষেধ কর। নতুবা মজলিস হতে চলে যাও কেননা চুপচাপ বসে থাকলে তুমিও গীবতকারী গণ্য হবে। যেমন মায়মুন বিন সিয়াহ (রাঃ) নিজের অবস্থার বর্ণনায় বলেন-একদিন আমি ঘুমাচ্ছিলাম স্বপ্নে দেখলাম আমার সামনে এক মৃত হাবশীকে এনে কেউ বলছে “হে মায়মুন তুমি এ হাবশী মৃতকে খাও” আমি বললাম- আমি কেন হাবশীকে খাব। সে বলল- তুমি অমুকের গীবত করেছ। আমি বললাম আল্লাহর কসম আমি তার গীবত করিনি সে বলল – যদিও তুমি গীবত করনি তবে শুনেছ। আর গীবত শুনা আর গীবত করা একই রকম গোনাহ।

খারাপ ধারনা ও গীবত:
কোন কোন নেককার পূণ্যবান লোক সম্পর্কে বিনা কারনে বিনা প্রমাণে সন্দেহ প্রবণ হয়ে খারাপ ধারনা পোষন অন্তরের গীবত।

অঙ্গ প্রত্যঙ্গের গীবত:
হাত,পা,নাক অথবা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে অন্যের দোষ বুঝিয়ে দেয়া যেমন কেউ হাটে বা বাজারে চলছে একজনের সাথে কিছু বেশী কথা বলছে আপনি ইশারা দিয়ে তার মাথা খারাপ বুঝিয়ে দেয়া ও গীবত। বা কেহ মজলিস থেকে উঠে গেল হাতে তার প্রতি ইশারা করা, ঠোট বাকা করা উদ্দেশ্য লোকটি ভাল নয় ইত্যাদি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের গীবত।
জনৈকা রমণী রাসুলুল্লাহ্ (সঃ) এর সান্নিধ্যে আগমন করে,আগন্তুক ছিল খর্বাকৃতির। সে চলে গেলে হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রাঃ) তুচ্ছার্থে তার দিকে ইশারা করলেন। এতে রাসুল (সঃ) বললেন হে আয়শা ! তুমি তার গীবত করলে। (বায়হকী )

গীবত হারাম:
গীবত অকাট্য হারাম এবং এর হারাম হওয়া সুস্পষ্ট দলিল দ্বারা প্রমাণিত। গীবত হারাম হওয়া অস্বীকারকারী কাফের। যে বলবে গীবত হালাল সে কাফের হয়ে যাবে। কেননা গীবত হারাম হওয়া কোরআনের আয়াত ও অসংখ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ পাক কোরআন মজিদে এরশাদ করেন – “তোমরা একে অন্যের গীবত করনা, কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পচন্দ করবে? অবশ্য তোমরা তা অপচন্দই করবে।”

এক সফরে মহানবী (সঃ) হজরত সালমান ফারেসী (রাঃ) কে দুই ধনাঢ্য ব্যক্তির সঙ্গী করে দেন। পথিমধ্যে একদিন মনজিলে অবতরণ করলে ধনী ব্যক্তিদ্বয় কোন কাজে চলে যান এবং সালমান (রাঃ) ঘুমিয়ে পড়েন। তারা দুইজন কাজ শেষ করে এসে জিজ্ঞেস করলেন হে সালমান – খাওয়া দাওয়ার কোন ব্যবস্থা হয়েছে কি? তিনি বললেন আমার ঘুম এসে গেছে। তাই কিছুই প্রস্তুত করতে পারিনি। তারা বললেন যাও ! রাসুল (সঃ) এর নিকট থেকে কিছু খাদ্য নিয়ে আস। সালমান (রাঃ) মহানবী (সঃ) কে বর্ণনা করলে তিনি বললেন আমার ভান্ডার রক্ষক ওসামা’র নিকট যাও এবং কিছু থাকলে নিয়ে আস। তিনি হজরত ওসামা (রাঃ) নিকট গেলে তিনি বললেন-আমার নিকট দেবার মত কিছুই নেই। সালমান (রাঃ) ফিরে গিয়ে তার সফরসঙ্গীদের অবহিত করলেন। এখবর শুনে তারা হজরত ওসামার গীবত করেন। এবং রাসুল (সঃ) এর নিকট সঙ্গীদ্বয় গমন করেন। রাসুল (সঃ) বললেন তোমাদের দাতে গোশতের রংলেগে রয়েছে। তারা বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ আজ আমরা মোটেই গোশত খাইনি। রাসুল (সঃ) বললেন- তোমরা এই মাত্র ওসামা এবং সালমানের গোশত খেয়েছ। কেননা তোমরা উভয়ের গীবত করেছ। আর কারো গীবত করা গোশত খাওয়ার নামান্তর। তখন আল্লাহ পাক উপরোল্লেখিত আয়াত নাজিল করেন।

গীবতকে গোশত ভক্ষনের সাথে তুলনার কারন:
কোরআনের আয়াত ও হাদীসে গীবতকে গোশত ভক্ষনের সাথে তুলনার কারন হচ্ছে কারো গোশত ভক্ষনে যেমন তাকে চরম হেয় অপদস্থ করা হয় অনুরুপ গীবত দ্বারাও তার সম্মান মর্যাদা চুর্ণ বিচুর্ণ করা হয়। সুতরাং যখন কারো গীবত করা হল তখন যেন তার গোশতই ভক্ষন করা হল। এ কারনে গীবতকে গোশত ভক্ষনের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অথবা মানুষ বা কোন মৃত জীবের গোশত ভক্ষন করা যেমন হীন তেমনি গীবত ও অত্যন্ত ঘৃনিত বিষয়।

হাসরে অন্যের গীবতকারীর অবস্থা:
হাসরের ময়দানে মানুষ যখন আল্লাহর দরবারে হাজির হবে,তখন সবাই নিজেদের গোনাহের কথা স্মরণ করবে। সেদিন কারো কোন সাহায্যকারী থাকবেনা। কেউ বলবে এ আমার অধিকার হরন করেছে কেউ বলবে এ আমার গীবত করেছে। আল্লাহ পাক ন্যায় বিচার করবেন তিনি প্রত্যেক দাবীদারকে সন্তুষ্ট করবেন। যারা গীবত করেছে গীবতকারীর আমলনামা থেকে সমপরিমান নেকি নিয়ে গীবতকৃত ব্যক্তির আমল নামায় দেয়া হবে এবং গীবতকৃত ব্যক্তির অপরাধগুলো গীবতকারীর আমলনামায় দেয়া হবে।

গীবত যেনার চাইতেও ভয়ংকর:
গীবতকে যেনার চাইতে ও ভয়ংকর বলার কারন হচ্ছে যেনা করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ মাফ করে দিতে পারেন যেহেতু সেটি আল্লাহর হক্ব কিন্তু গীবত করা, কাউকে গালি দেয়া, কারো প্রতি জুলুম করা এগুলো বান্দার হক্ব তাই বান্দা মাফ করে না দেয়া পর্যন্ত মাফ হবেনা ।

হজরত সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ সাকাফী হতে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসুল (সঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম – হে আল্লাহর রাসুল (সঃ) আমার জন্য যে সকল বস্তু ভয়ংকর মনে করেন তন্মধ্যে সর্বাধিক ভয়ংকর কোনটি? বর্ণনাকরী বলেন-তখন রাসুল (সঃ) স্বীয় জিহ্বা ধরলেন এবং বললেন- এটি অর্থাৎ জিহবা। (তিরমিযী)

এক যুবক আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারক (রঃ) এর সমীপে এসে
বলতে লাগল আমি একটি বড় গোনাহ করেছি তিনি বললেন বল কি গোনাহ করেছো? যুবক বলল আমি যেনা করেছি তিনি বললেন আলহামদুলিল্লাহ ! তুমি গীবত তো করনি । কেননা গীবত যেনার চাইতে ও বড় গোনাহ । (তাজকেরাতুল আউলিয়া)

এক মহিলা এক মাদরাসায় এসে মাদরাসা প্রধানকে বলল, আমি একটি মাসআলা জিজ্ঞেস করতে চাই, কিন্তু লজ্জার কারনে তা মুখে আনতে পারছিনা। মাদরাসা প্রধান বললেন, তোমার মাসআলা বর্ণনা কর লজ্জা করনা। তখন মহিলা বলল- আমি যেনা করেছি এবং গর্ভ ধারন করেছি অতঃপর যেনার ফসল যে ছেলে জন্ম নিয়েছে তাকে হত্যা করেছি। এ বর্ণনা শুনে উপস্থিত সকল বিস্মত হয়। মাদরাসা প্রধান বললেন, হে লোক সকল ! তোমরা এ গোনাহে বিস্ময় প্রকাশ করেছো জেনে নাও গীবতের গোনাহ এর চাইতে বড়। কেননা যেনাকার গোনাহ হতে তওবা করলে আল্লাহ তওবা কবুল করেন। কিন্তু গীবতকারী তওবা করলেও আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করেন না যতক্ষন না যার গীবত করা হয়েছে সে মাফ করে। ( খাযানাতুর রেওয়ায়াত)

শেখ সাদীর ঘটনা:
এক রাতে শেখ সাদী তিনি পিতার নিকট বসে কোরআন তিলাওয়াত করছিলেন। আর কিছু লোক পড়ে ঘুমাচ্ছিল । শেখ সাদী পিতাকে বললেন লোক গুলোর কি হয়েছে এভাবে পড়ে ঘুমাচ্ছে। যদি না ঘুমিয়ে জেগে জেগে নামাজ আদায় করত। শেখ সাদীর পিতা বললেন বাবা তুমিও যদি কোরআন তেলাওয়াত না করে এভাবে ঘুমিয়ে থাকতে তবে অনেক ভাল হত কারন গীবত থেকে বেঁচে থাকতে। অন্যের দোষ বর্ণনা থেকে মুক্তি পেতে।

কিয়ামতে গীবতকারীর সাথে যে ব্যবহার করা হবে:
হজরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন- যে দুনিয়ায় নিজের ভাইয়ের গোশত খেয়েছ গীবত করেছ আখেরাতে গীবতকারীর সামনে সে গোশত উপস্থাপন করা হবে। তাকে আদেশ করা হবে, যেভাবে দুনিয়ায় তুমি তার গোশত খেয়েছ গীবত করেছ, এখনও অনুরুপ তুমি তার গোশত খাও। গীবত কারী সে গোশত মুখে দিতেই তার মুখ বিকৃত হয়ে যাবে। এতে সে অপমাণিত ও অপদস্থ হবে। ( আততারগীব ওয়াততারহীব)

হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর উপদেশ:
হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেন- যখন তুমি তোমার কোন বন্ধুর গীবত করেতে ইচ্ছা করেবে তখন নিজের দোষের কথা স্মরণ কর। নিজের গোনাহ সমুহ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা কর। তাহলে গীবত থেকে নাজাত পাবে এবং জান্নাত পাবে। যদি নিজের দোষ সমুহ না দেখে অন্যের দোষ সমুহ আকড়ে ধর তাহলে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতে তোমার দোষ সমুহ প্রকাশ করে দেবেন। (এহিয়াউল উলুম)

গীবত ফাসেক পাপাচারীর মেহমানদারী:
হজরত আবু এমরান (রঃ) বললেন-“গীবত ফাসেক পাপাচারীদের মেহমানদারী এবং নারীকুলের চারণভূমি, মানুষ কুকুরদের তরকারি এবং আল্লাহ ভীরুদের দুরত্ব অবলম্বনের ক্ষেত্র। ’’

গীবত ফাসেক পাপাচারীদের মেহমানদারী- বলার কারণ ফাসেক পাপাচারীরা একত্রিত হলে গীবতের বাজার জমে। বর্তমানকালে বিশিষ্টজনরা যখন খেতে বসেন তখন অনেক গল্পকাহিনী বর্ণনা করেন যা গীবতে পরিনিত হয়। একে অণ্যের সাথে মিলিত হলে মানুষের গীবত দ্বারা পরস্পরের মেহমানদারী করে, দোষত্র“টি প্রকাশ করে, অপমান – অপদস্থ করে গীবত দ্বারাই তাদের মন সন্তুষ্ট হয় । সুতরাং গীবত ফাসেক পাপাচারীদের মেহমানদারী।

রমণীকুলের চারণভূমি বলার কারন:
এ উক্তির মর্ম হল চতুষ্পদ জন্তু যেমন ঘাস পেলে খুশী হয়ে দৌড়ায় তেমনি নারীরাও কোন মজলিসে কারো গীবত হচ্ছে দেখতে পেলে ঝটপট গিয়ে শরীক হয়।

জাহান্নামে গীবতকারীদের খাজলী হবে:
জাহান্নামে গীবতকারীদের ভীষণ খাজলী হবে। খাজলীর কারনে তাদের চামড়া নিঃশেষ হয়ে যাবে। হাড় বেরিয়ে আসবে। তখন ধ্বনিত হবে হে লোক সকল! এ খাজলীর কারনে কি তোমাদের কষ্ট হচ্ছে? জাহান্নামীরা জবাব দিবে হ্যাঁ। তাদেরকে জবাব দেয়া হবে, তোমাদের এ কষ্টের কারন, দুনিয়ায় তোমরা মানুষদেরকে হেয় পতিপন্ন করতে,অপমান -অপদস্থ করতে, মুসলমানদেরকে কষ্ট দিতে তাই।

গীবত মোনাফেকী:
হজরত ইবনে উমর (রাঃ) এক ব্যক্তিকে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের গীবত করতে শুনে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, যদি হাজ্জাজ এখানে উপস্থিত থাকতো তবে তুমি কি তার দোষ বর্ণনা করতে ? সে বলল না। তখন তিনি বললেন – মানুষের সামনে প্রশংসা এবং পিছনে দূর্নাম রটনা রাসুলুল্লাহ (সঃ) বিদ্যমান থাকা অবস্থায় সাহাবায়ে কেরাম এ আচরণকে মোনাফেকী মনে করতেন। (এহইয়াউল উলুম)

মিরাজের ঘটনা:
রাসুলুল্লাহ (সঃ) এরশাদ করেন- যখন আমি মিরাজে গমন করি, তখন চলার পথে বিস্ময়কর এবং ভয়ংকর দৃশ্য সমুহ অবলোকন করি। তা হল -এক জায়গায় একদল লোককে দেখতে পেলাম, তাদের নোখগুলো তামার। তারা এ তামার নোখ দ্বারা নিজেদের মুখমন্ডল এবং বক্ষ আচড়াচ্ছে। আমি জিব্রাইল (আঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন-এরা দুনিয়ায় মানুষের গোশত খেত (গীবত করত)।

গীবত ও চোগলখোরীর মধ্যে পার্থক্য:
দুই ব্যক্তির মধ্যে ঝগড়া মনোবাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একজনের কথা অন্য জনের নিকট বর্ননা করা হচ্ছে চোগলখোরী। যেমন – কাউকে এরুপ বলা অমুক তোমাকে মন্দ বলে, তোমার নিন্দাবাদ করে ।
হজরত হোজায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন-আমি রাসুলুল্লাহ (সঃ) কে বলতে শুনেছি চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না (বুখারী)

আর গীবত হচ্ছে কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ বর্ননা করা। এ ক্ষেত্রে ঝগড়া, ফ্যসাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্য না ই থাকুক। অতএব যেখানে চোগলখোরী থাকবে সেখানে গীবতও থাকবে।

হজরত সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি আমার জন্য তার দু-চোয়ালের মধ্যস্থিত স্থানের এবং দু-পায়ের মধ্যস্থিত স্থানের জিম্মাদার হতে পারবে আমি তার জন্য বেহেশতের জিম্মাদার হব। (বুখারী)
রাসুল (সঃ) এরশাদ করেছেন – “লা তাবাখাজু ওলা তাদাবারু ওলা তানাফাসু ওকুনু ইবাদাল্লাহি ইখওয়ানা”
— তোমরা পরস্পরে ঈর্ষা বিদ্বেষ পোষন করনা, গীবত করনা, দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়োনা, আর আল্লাহর বান্দারা সবাই ভাই ভাই হয়ে যাও।

গীবতের ক্ষতি:
গীবতের কারনে দুনিয়া আখেরাতের ক্ষতি হয়
১.দোয়া কবুল হয়না
যে বেশী গীবত করে সে খুব কমই অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়। এজন্য তার দোয়া কবুল হয়না এবং তার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়না।
২.ফকীহ আবুল লায়স সমরকন্দি (রঃ) তাম্বীহুল গাফেলীন গ্রন্থের ঈর্ষা বিদ্ধেষ অধ্যায়ে উল্লেখ করেন – তিন ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়না।
১. হারাম ভক্ষণকারী
২.অধিক গীবতকারী
৩. মুসলমানের সাথে বিদ্ধেষ পোষন কারী বা কৃপনতা কারী।
লোকেরা হজরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) কে দোয়া কবুল না হওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন-তোমাদের অন্তর মৃত আর আটটি কারনে তোমাদের অন্তরের সজীবতা রাখেনী তা হচ্ছে।
১. তোমরা আল্লাহ তায়ালার মহত্ব সম্পর্কে জান, তার শক্তি কুদরত সম্পর্কে অবগত অথচ তার নির্দেশ পালনে ত্র“টি কর।
২. তোমরা কোরআন তিলাওয়াত কর অথচ কোরআনের বিধান অনুযায়ী আমল করনা ।
৩. মুখে নবীর মহব্বত প্রকাশ কর অথচ সুন্নাহ ভিত্তিক জীবন পরিচালনা করনা।
৪. তোমরা মুখে বল মৃত্যুকে ভয় করি অথচ এবাদতের মাধ্যমে তার প্রস্তুতি গ্রহন করনা।
৫. আল্লাহ তায়ালা বলেছেন শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্র“ তাকে শত্র“ রুপেই গ্রহন কর অথচ তোমরা গোনাহের কাজ করে শয়তানকে বন্ধুরুপে গ্রহন করেছ।
৬. তোমরা মুখে বল আমরা জাহান্নামকে ভয় করি অথচ সদা সর্বদা গোনাহের কাজ করে নিজেদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করছো।
৭. তোমরা জান্নাতে যাওয়ার কামনা বাসনা পোষণ কর, অথচ এজন্য কোন পাথেয় সংগ্রহ করনা।
৮. যখন তোমরা জাগ্রত হও তখন নিজের দোষ পিছনে ফেলে দাও নিজের দোষের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে অন্যের দোষ ত্র“টি নিজের সামনে রাখ, মানুষের নিন্দাবাদ কর, দূর্ণাম রটাও। এসব কারনে তোমাদের প্রতি রহমত নাজিল হয়না । ফলে তোমাদের দোয়াও কবুল হয়না।
৩.আমলনামা থেকে নেকী কমে যায়:
হজরত আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) বলেন- কেয়ামতের দিন যখন প্রত্যেকের হাতে আমলনামা দেয়া হবে, তখন প্রত্যেকেই নিজ নিজ আমলনামায় নেকী দেখে খুশী হবে। আর যখন ওটার প্রতি দৃষ্টি পড়বে তখন অস্থির হবে। কিছু লোক নিজেদের আমলনামায় এমন নেকীসমূহ দেখতে পাবে যা তারা দুনিয়ায় করেনি। তারা আল্লাহতাআলাকে বলবে, ইয়া আল্লাহ! এসব নেক কাজ তো আমরা করিনি। এগুলো কিভাবে আমাদের আমাদের আমলনামায় অন্তর্ভুক্ত হল? আল্লাহ বলবেন, যদিও তোমরা এসব নেক কাজ করনি, কিন্তু যারা তোমাদের গীবত করেছে, তাদের আমলনামা থেকে এসব নেকী মিটিয়ে তোমাদের আমলনামায় লেখে দেয়া হয়েছে আর তাদের গীবত সম্পর্কে তোমরা অবহিত ছিলে না।
৪. আমলনামায় পাপের আধিক্য হওয়া:
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন তোমরা গীবত থেকে বেচেঁ থাক, কেননা তাতে তিনটি বিপদ রয়েছে এক গীবতকারীর দোয়া কবুল হয়না। দুই – তার কোন নেক কাজই কবুল হয়না। তিন- তার আমলনামায় পাপাধিক্য হয়।
হজরত ইমাম গাজ্জালী (রঃ) বলেন- যদি তুমি দিনে রোজা রাখ আর রাতে এবাদত কর অতঃপর যদি লক্ষ্য কর কি পরিমান গীবত করেছ তবে দেখবে তোমার দিনের রোজা ও রাতের এবাদত এর চেয়ে পাপের বোঝা বেশী হয়ে গেছে। তাই অন্যের অধিকারের বোঝা থেকে নিজেকে বাচিঁয়ে রাখ।

৫.পূণ্য কর্ম সমুহ কবুল না হওয়া:
রাসুল (সঃ) এরশাদ করেন-আগুন এত তাড়াতাড়ি শুকনো বস্তুর উপর প্রতিক্রিয়া করেনা, যত তাড়াতাড়ি পূণ্য কর্মসমুহের উপর গীবতের প্রতিক্রিয়া হয়।
হজরত মোয়াজ (রাঃ) এক দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন উক্ত হাদীসে রাসুল (সঃ) এরশাদ করেন- হে মোয়াজ ! যারা আমলের সংরক্ষক এবং যেসব ফিরিশতা আমল লিপিবদ্ধ করেন কখনো এমন হয় যে, ফিরিশতা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের নেক আমল সমুহ আসমানে নিয়ে যান, আর আমলসমুহ সূর্যের মত চমকিত হয়, আমলবাহী ফিরিশতা প্রথম আসমানে উপনীত হয়ে তা দ্বিতীয় আসমানে নিয়ে যেতে চান, তখন প্রথম আসমানে আল্লাহর নিযুক্ত ফেরেশতা বলেন এসব আমলকারীর মুখের উপর ছুড়ে মার এবং তাকে ক্ষমা করা হয়নি বলে সংবাদ দাও কেননা সে মুসলমানদের গীবত করেছে। সুতরাং তাহার আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হয়নি।
(তাম্বীহুল গাফেলীন -তাফাক্কুর অধ্যায়)

৬. কিয়ামতে অধিকারের দাবীদারের ফরিয়াদ:
একদিন জনৈক ব্যক্তি যাহেদ (রঃ) এর সম্মুখে হাজ্জাজের গীবত ও তার জুলুম অত্যাচারের বর্ণনা করতে শুরু করে। তখন যাহেদ (রঃ) বললেন- আল্লাহ তায়ালা যথার্থ ন্যায় বিচারক। তিনি যেমন হাজ্জাজ থেকে অত্যাচারীতদের বিনিময় গ্রহন করবেন তেমনী হাজ্জাজের গীবতকারীদের কাছ থেকে ও তার গীবতের বিনিময় গ্রহন করবেন যখন সে তা দাবী করবে।

৭. গীবতকারীকে এক হাজার বৎসর দাড় করিয়ে রাখা হবে:
কিয়ামতের দিন আটটি মনজিল হবে এবং চতুর্থতম মনজিলে গীবতকারীকে এক হাজার বৎসর দাড় করিয়ে রাখা হবে।

৮. কেয়ামতে দুঃখ লজ্জায় পতিত হওয়া:
কিয়ামতের আদালতে যখন কেউ কারো উপর দাবী করবে যে, সে আমার গীবত করেছে তখন আল্লাহ তায়ালা এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেন গীবতকারী স্বীকার করবে এবং জন সম্মুখে লজ্জিত হবে।

কেয়ামতে গীবতকৃতের গোশত ভক্ষন:
কিয়ামতে যার গীবত করবে তাকে মৃতরুপে উপস্থাপন করা হবে এবং গীবতকারীকে হুকুম দেয়া হবে জীবদ্দশায় তুমি তার গোশত খেয়েছ এখন মৃত্যুর পরও তুমি তার গোশত ভক্ষন কর। সুতরাং গীবতকারী মৃতের গোশত খাবে এবং মুখ অত্যন্ত বিকৃত করবে।
কিয়ামতের দিন নিজের গোশত ভক্ষন

রাসুল (সঃ) মেরাজ হতে প্রত্যাবর্তন করে এরশাদ করেন “যখন আমি মেরাজে গমন করি , তখন কিছু লোককে দেখতে পেয়েছি যাদের পার্শ্বদেশ হতে গোশত কেটে মুখে নিক্ষেপ করা হচ্ছে আর ফেরেশতাগন তাদের বলছেন যেভাবে দুনিয়ায় তোমরা আপন ভাইয়ের গোশত ভক্ষন করতে এখন তেমনি নিজের গোশত ভক্ষন কর । আমি জিজ্ঞেস করলাম হে জিব্রাইল (আঃ) এরা কারা ? তিনি বললেন এরা আপনার উম্মতের সেসব লোক যারা মানুষের গীবত করত।

জাহান্নামে বানরে পরিনত:
নুজহাতুল মাজালেস গ্রন্থে হজরত হাতেম আসাম্ম (রঃ) এর উক্তি তিনি বলেন-গীবতকারী জাহান্নামে বানরে পরিাণত হবে।

গীবতে শয়তান খূশী হয়:
একদিন হজরত ঈসা (আঃ) ইবলীস শয়তানকে দেখতে পেলেন তার এক হাতে মধু এবং আরেক হাতে ছাই তিনি এর কারন জিজ্ঞেস করলে সে বলল, এ ছাই আমি এতিমদের চেহারায় নিক্ষেপ করি , যাতে তাদের চেহারা বিশ্রী হয়ে যায় মানুষ তাদের থেকে দুরত্ব অবলম্বন করে। আর মধু গীবতকারীদের মুখে নিক্ষেপ করি কেননা তাদের প্রতি আমি সন্তুষ্ট ও প্রসন্ন চিত্ত হয়ে থাকি ।

আল্লাহ ও রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করা হয়:
যেহেতু আল্লাহ ও তার রাসুল (সঃ) গীবত নিষিদ্ধ করেছেন সেহেতু গীবতের মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসুলের নিষেধের বিরুদ্ধ চারণ করা হল। আর যারা আল্লাহ ও রাসুলের বিরুদ্ধাচরন করে তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে ধ্বংস অনিবার্য।

গীবতের কারনে রোজা মাকরুহ হয়:
গীবতকারী রোজাদার হলে তার রোজা মাকরুহ হয়ে যায়। বরং হাদীস গ্রন্থ মেশকাত শরীফের ভাষ্য আশেয়াতুল লামায়েতে বলা হয়েছে গীবতের কারনে রোজা নষ্ট হয়ে যায় ।
গীবতের কারনে রাসুল (সঃ) পুনরায় রোজা রাখার নির্দেশ দেন দুই রোজাদার জোহর কিম্বা আসরের নামাজ রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সাথে আদায় করলেন আসর নামাজ পরে তিনি তাদেরকে বললেন তোমরা যাও পুনরায় অজু কর এবং নামাজ আদায় কর। আর তোমাদের রোজা পূর্ণ করে অন্য কোন দিন রোজা ক্বাজা কর তারা আরজ করল হে আল্লাহর রাসুল (সঃ) কেন ক্বাজা করব? রাসুল (সঃ) বললেন-কেননা তোমরা অমুকের গীবত করেছ। (বায়হকী- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।)

গীবতের কারন:
১.ক্রোধ-
মানুষ কারনবশত কারো উপর ক্রুদ্ধহলে গীবত করে।
২.বংশ গৌরবঃ
নিজের বংশকে উত্তম মনে করে অন্যের বংশের গীবত করা ।
৩.এবাদতের অহংকার-
নিজেকে নেক কাজের কাজী মনে করে অহংকার করা, নিজেকে পুত পবিত্র ও মোত্তাকী ভাবা এবং অন্যকে হেয় করতে গীবত করা ।
৪.সাথীদের অনুসরণ করা-
বন্ধুজন বসে গল্প গুজব কওে, গীবত কওে, হাসিঠাট্্রা করে তাই অনেকেই মনে করেন আমিও সেখানে যাই দু চারটা কিস্সা কাহিনী শোনাই।
৫.বদকার আলেমদের অনুসরণ-
কিছু কিছু আলেমরা নিজের ইলিম ও বুজুর্গী জাহির করতে গীবত করেন। এতে অনেকেই ভাবেন হুজুররা গীবত করছেন তো আমরাও করি।
৬.ঈর্ষা-
মানুষ যখন অন্তরে কারো প্রতি ঈর্ষা পোষন করে তখন সে সদা সর্বদা ঈর্ষিত ব্যক্তির গীবত করে।

গীবতের পরিণাম:
১. গীবত দ্বারা পারস্পারিক ভালবাসা,মহব্বত ও ভ্রাতৃত্ববোধ বিনষ্ট হয়।
২. সামাজিক জীবনে ঘৃনা, হিংসা ও শত্র“তার উন্মেষ ঘটে।
৩. অনেক সময় শত্র“তা ও মারামারি সংঘটিত হয়।
৪. সামাজে শান্তি শৃংখলা ও ভারসাম্য বিনষ্ট হয়।
৫. আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন।

গীবতের কাফ্ফারা:
হজরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেছেন- গীবতের কাফ্ফারা হলো তুমি যার গীবত করেছ তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। এরুপ বলবে হে আল্লাহ আমাকে ও তাকে ক্ষমা করুন। (বায়হকী দাওয়াতুল কবীর)

গীবতের কাফ্ফারার বিধান:
গীবতকারী নিজের জন্য এবং তার জন্য দোয়া করবে। তার ক্ষমা প্রার্থনা করবে। মাসআলার প্রকৃত রুপ এমন
১. যার গীবত করা হয়েছে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। পরে দোয়া ও ক্ষমা চাইবে।
২. যদি সে ব্যক্তি দুরে থাকে সরাসরি তার নিকট ক্ষমা চাওয়া সম্ভব নয় তখন এভাবে দোয়া করবে “আল্লাহুমাগফিরলি লি অলিমান ইবতাখতাহু”
৩. যদি সে মৃত্যু বরণ করে থাকে তবে শুধু ইসতেগফার করবে।



ছোট্ট একটি তাসবিহ কিন্তু সাওয়াব-ফজিলত অনেক বেশি।

উম্মত জননী হজরত জুওয়াইরিয়া (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন আল্লাহর নবী (সা.) ফজরের সময় আমার ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। তখন আমি জায়নামাজে ছিলাম। ত...