১লা সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১লা মহররম (চাদঁ দেখা সাপেক্ষে) হওয়ার সম্ভাবন।
মহররম মূলত: হিজরী বৎসরের প্রথম মাস,এই মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়।বছরের প্রথম মাস আশুরা অত্যন্ত সম্মানিত এর রয়েছে ঐতিহাসিক তাৎপর্য্য। অনুরুপ ১০ই মহররম বা আশুরার রয়েছে অতীব গুরুত্বপূ্র্ন্ এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস।ভুমন্ডল ও নভোমন্ডলের সৃষ্টিকুলের প্রাথমিক বিভাজনের সুচনা হয় এই আশুরায়।হয়রত আদম (আ:)এর সৃষ্টি, উত্থান, স্থিতি, পৃথিবীতে আগম সব কিছু ঘটনাই ঘটেছিল এই আশুরায়।হয়রত নূহ আ: এর নৌযানের যাত্রা আরম্ভ এবং বন্যা প্লাবনের সমাপ্তি হয়েছিল আশুরাতে।হয়রত মুসা আ: এর সমুদ্রপথে রওয়ানা হওয়ার দিনটিও ছিল এই আশুরা।
এরই ধারাবহিকতায় আল্লাহর রাসুল হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা:) আশুরায় কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার সমুহ সম্ভাবনার কথা ব্যাক্ত করেছেন। আশুরা এলে তিনি বিনয়ে বিনম্র থাকতেন এবং রোযা পালন করতেন। আশুরা শব্দটি আরবি আশারা শব্দ থেকে এসেছে এর অর্থ্ দশ আর আশুরা মানে হলো দশম। ইসলামের পরিভাষায় মহরমের দশ তারিখকে আশুরা বলে।সৃষ্টির শুরু থেকে মহরমের দশ তারিখ তথা আশুরার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ন্ ঘটনা ঘটেছিল। ফলে আশুরার গুরুত্ব ও মাহাত্ব উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে নবী দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা:) এর শাহাদাত এই দিনকে বিশ্ববাসির কাছে সর্বাধিক স্মরনীয় ও বরণীয় করে রেখেছে।
আশুরার রোযা সব নবীর আমলেই ছিল। নবী করিম (সা) মক্কায় থাকতেও আশুরার রোযা পালন করতেন।হিজরতের পর মদীনায় এসে নবী করিম (সা) দেখতে পেলেন ইহুদীরাও এই দিনে রোযা রাখছে।প্রিয় নবী(সা:)তাদের এই দিনে রোযা রাখার কারন জানতে চাইলেন,জানতে পারলেন, এই দিনে মুসা (আ:)সিনাই পাহাড়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত কিতাব লাভ করেন।এই দিনেই তিনি বনি ইসরাইলের ফেরআউনের জেল খানা থেকে উদ্ধার হন এবং লোহিত সাগর অতিক্রম করেন।আর ফেরআউন সেই সাগরে ডুবে মারা যায়।তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ইহুদিরা এই দিনে রোযা রাখে।
মহানবী (সা) বললেন,মুসা (আ:) এর সংগে আমাদের সম্পর্ক্ তাদের চেয়ে বেশী ঘনিষ্ট ও অগ্রগন্য।এর পর তিনি দশই মহররম এর সংগে নয়ই মহররম এবং এগারই মহররম মিলিয়ে দুইটি রোজা রাখতে বললেন।কারন ইহুদীদের সংগে মুসলমানদের যেন কোন সাদৃশ্য না হয়ে যায়।দ্বিতীয় হিজরীতে রমজান মাসের রোযা ফরজ করা হলে,আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়।তবে রমজানের রোজা রাখার পর,আশুরার রোজা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন্ ও ফজিলতপূর্ন্।
এমাসের নফল রোজা ও অন্যান্য এবাদত রমজান মাস ব্যাতিত অন্য যেকোন মাস অপেক্ষা অধিক উত্তম।দশই মহররম আশুরার রোজা রাখা সুন্নত।আশুরার দিনে ও রাতে নফল নামাজ পড়া, মহররম মাসের তের ও চৌদ্দ তারিখের আইয়ামে বীজের সুন্নত রোজা,বিশ উনত্রিশ ও ত্রিশ তারিখের নফল রোজা এবং প্রতি সোম ও বৃহ:বার সুন্নত রোযা এবং এই মাসে মহররম মাসে প্রতি রাতে ১০০ বার দরুদ শরীফ এবং ৭০ বার এস্তেগফার পড়া অত্যন্ত ফজিলতের আমল।এই আমলটি রাহাতুল কুতুব নামক ইমাম রাজিন (রা:) উল্লেখ করেছেন।
আশুরার রোযা রাখার চারটি নিয়ম রয়েছে। (১) ১ থেকে ১০ তারিখ পর্ন্তুল মোট দশটি রোজা রাখা। (২) তা সম্ভব না হয়ে ৯,১০ ও ১১ তারিখ মোট তিনটি রোজা রাখা। (৩) তাও সম্ভব না হলে ৯ ও ১০ তারিখ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ ২টি রোজা রাখা। (৪) এটাও যদি সম্ভব না হয় শুধু ১০ তারিখে একটি হলেও রোজা রাখা। যদি কেউ ১০ তারিখের রোজা রাখে এবং ৯ ও ১১ তারিখ রাখতে না পারেন তবে জোড়া মিলাবার জন্য অন্য কোন তারিখের রোজা রাখার প্রয়োজন হবে না।
হযরত কাতাদা (রা:) থেকে বর্নিত রাসুলে আকরাম (সা:)বলেন:”আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী,আল্লাহ তা’লা এর উসিলায় অতীতের এক বৎসরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।(তিরমীজি,মসনদে আহমদ)।
হযরত আবু হোরায়রা (রা:) থেকে বর্নিত,রাসুলে করিম (সা:)বলেন,”রমজানের রোজার পরে মহররমের রোজ হলো সর্শ্রেনদষ্ট।যেমন ফরজ নামাজের পরে শেষ রাতের তাহাজ্জুতের নামাজ সব চেয়ে বেশী মর্যাদাসম্পন্ন।”
আসুন,আশুরার দিন আগে বা পরে এক দিন সহ রোজা রেখে আল্লাহর কল্যান লাভের সুযোগ গ্রহণ করি।–আমিন।

No comments:
Post a Comment