Friday, August 30, 2019

১০টি ছোট ছোট আমল কেয়ামতের দিন নেকির পাল্লাকে ভরে দিবে।

আ’মল সমূহ অতি ছোট কিন্তু নেকীর পাল্লাকে ভরিয়ে দেবে,আর সে পাল্লা কত বড় আপনারা কি জানেন ? কেয়ামতের দিন যে পাল্লা তাতে যদি সাত আসমান এবং সাত জমিন এনে ঐ পাল্লা সমূহের একটি পাল্লায় রাখা হয় তাহলে একটি পাল্লাও ভরবে না। সে বিশাল পাল্লাকে ভরিয়ে দেবে অতি ছোট ছোট দশটি আ’মল।
(১) কলেমা লা-ইলাহা ইল্লাহ :
===================
এই কলেমা ব্যাতীত মানুষের দুনিয়াতেও নিষ্কৃতি নাই আখেরাতেও নিষ্কৃতি নাই। কেয়ামতের দিন এক বান্দার কোন নেকী হবে না,সে খুবই পেরেশান হবে। তখন আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন বলবেন:পেরেশান কেন পেরেশান হইও না।তোমার একটি আমল আমার কাছে আছে।ফেরেশতাদের নির্দশ দেয়া হবে,তারা ঐ আমলে একটি কার্ড ছোট একটি বতাকা(বতাকা অর্থ কার্ড)নিয়ে আসবে।ঐ কার্ডখানি এনে যখন মিজানের পাল্লায় রাখা হবে: এক পাশে তার গুনাহের বোঝার পাল্লা অপর পাশে তার নেকীর পাল্লা । যেখানে কোন নেকী থাকবে না। আল্লাহর নির্দশে তখন নেকীর পাল্লায় ঐ কার্ডখানি রাখা হবে- সেটা তার সমস্ত গুনাহের চাইতে ওজনে বেশী হবে। সুবহানআল্লাহ্। ওটা কিসের কার্ড জানেন ? সেটা হলো কলেমা: লা ইলাহা ইল্লাহর কার্ড। সেখানে লেখা থাকবে - লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। সেই ছোট কার্ডটি তার নেকীর পাল্লাকে ভরে দেবে। এবং আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন নির্দশ দিবেন,তাকে জান্নাত দেয়ার জন্য। সুবহানআল্লাহ্ ।
(২) আলহামদুলিল্লাহ্ :
===============
এটাও খুব ছোট আমল,কিন্তু কেয়ামতের ময়দানে সাত আসমান সাত জমিন যে পাল্লাকে ভরতে পারে না,সে পাল্লাকে ভরিয়ে দেবে।
যে আল্লাহর ফায়সালায় রাজি হবে,আল্লাহ তাকে যে হালতে রেখেছে,তাতে সে খুশী হয়ে বলে দেয়:আলহামদুলিল্লাহ্। সে যদি গরীব হয়,তাতেও সে বলে:আলহামদুলিল্লাহ্। সে যদি অসুস্থ্য হয় তাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে,আপনি কেমন আছেন ? সে বলে: আলহামদুলিল্লাহ্।সকল প্রশংসা আমার প্রভুর জন্য,আমার আল্লাহর জন্য,আমি ভাল আছি।কারন সে অন্যের তুলনায় তো ভাল আছে।
আমরা সামান্য সর্দ জ্বর হলে,সামান্য পেরেশান হলে আমরা আল্লাহর না-শুকরি করি।সেটা উচিৎ নয়। বরং সদা সবর্দা আল্লাহর প্রশংসা করতে হবে।
এক লোক মসজিদের মধ্যে নামাজ পড়তে গেয়ে সে যখন মসজিদ থেকে বের হলো,দেখতে পেল তার জুতা চুরি হয়ে গিয়েছে। সে খুবই পেরেশান হয়ে মসজিদ থেকে খালি পায়ে প্রচন্ড গরম চলে যাচ্ছিল,সে খুবই পেরেশান কিন্তু কিছু দুর গিয়ে সে দেখলো এক লোক সেও মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার দুটি পা নেই। তখন সে শুকরিয়া আদায় করলো,আল্লাহর প্রশংসা করলো,যে আমারতো দুটি পা আছে কিন্তু এ লোকটির তো দুটি পা ও নেই।
সেজন্য আমরা সব সময় আমাদের চাইতে যে কষ্টে আছে,যে দু:খে আছে,যে পেরেশানীতে আছে,তার কথা যদি আমরা খেয়াল করি তাদের তুলনায় আল্লাহ আমাদেরকে সুস্থ্য রেখেছেন ভাল রেখেছেন। সে কথা যদি আপনি খেয়াল করেন তাহলে,আপনার সকল দু:খ পেরেশানী দুর হয়ে যাবে।এবং আপনি বলতে পারবেন : আলহামদুলিল্লাহ্।হাদিস শরীফে আছে যে সন্তুষ্ট চিত্তে আলহামদুলিল্লাহ্ বলে কেয়ামতের দিন দুটি পাল্লা নেকী দ্বারা ভরে দেয়া হবে।
(৩) সুবহান আল্লাহি ওয়া বিহামদীহি সুবহান আল্লাহিল আজিম : আমলটি খুব ছোট কিন্তু এর দ্বারাও নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে।
এ দুটি কালিমা আল্লাহর খুব প্রিয়,জিহ্বার জন্য,মুখে উচ্চারনের জন্য এটি খুবই হালকা।কিন্তু মিজানের পাল্লায় এটি খুবই ভারী তা হলো:সুবহান আল্লাহি ওয়া বিহামদীহি সুবহান আল্লাহিল আজিম। খুব বেশী বেশী এই জিকিরটি করতে থাকুন তা আপনার নেকীর পাল্লাকে ভারী করে দেবে।
(৪) সৎচরিত্র : রাসুল (সা:) এরশাদ করেছেন,সৎচরিত্র কেয়ামতের দিন সবচেয়ে ভারী আমল হবে। আমাদের প্রিয় নবী (সা:) সৎচরিত্রের তিনটি সুত্র বলেছেন।
সৎ চরিত্রে সুত্র হলো:
ক.হালাল তালাশ করা,
খ.হারাম থেকে বেঁচে থাকা,
গ.ঘরের লোকদের প্রতি উদার হওয়া:আপনি ঘরের লোকদের জন্য খরচ করাতে,তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে,কাপড় চোপড়ের ব্যাপারে,তাদের যেকোন প্রয়োজনের ব্যাপারে,হালাল প্রয়োজনের ব্যাপারে উদার হওয়া।মুক্ত হস্তে তাদের জন্য খরচ করা।
এই তিন টি সুত্র আপনি মনে রাখবেন, তাহলে আপনি সৎচরিত্রবান হিসাবে গন্য হবেন। এবং এই আমলটি আপনার মিজানের পাল্লাকে ভরিয়ে দেবে।
(৫)রাসুল (সা:) বলেন,অনেক বড় সফল ঐ ব্যাক্তি, যার মধ্যে পাচঁটি জিনিস এসে গেছে,যা তার নেকীর পাল্লাকে ভরিয়ে দেবে:
১. লা ইলাহা ইল্লাহ,
২.সুবহানআল্লাহ,
৩.আলহামদুলিল্লাহ,
৪.আল্লাহু আকবার,
৫.যার নেককার একজন সন্তান মৃত্যু বরন করেছে এবং সে ধৈর্য্য ধারণ করেছে।
-এটা এত বড় আমল যে সে জান্নাতে চলে যাবে।
(৬) যে ব্যাক্তি নিজের মু’মিন ভাই বোনদের জন্য দো’য়া করেন/অর্থাৎ অন্যদের জন্য দো’য়া করবেন:আমরা শুধু নিজের জন্য দো’য়া করি,কিন্তু যে ব্যাক্তি অপরের জন্য দো’য়া করবেন-তার নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে।নবী করিম (সা:) বলেন:”যে ব্যাক্তি শুধু এতটুকু বলবে, আল্লাহুম মাগফিরলীল মু’মীনিন ওয়াল মুমিনাত-হে আল্লাহ , তুমি মুমিন নরনারীদের ক্ষমা করে দাও-তার নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে।”এবং এই আমলটি তার নেকীর পাল্লাকে ভারী করে দেবে-যা তার জান্নাতে যাওয়ার জন্য সহায়ক হবে।
(৭) জানাযায় অংশ গ্রহণ করা: নবী করিম (সা:) এরশাদ করেন,”যে জানাজায় অংশ গ্রহণ করে,তার আমল নামায় ওহুদ পাড়ারের সমপরিমান নেকী দেয়া হয়।আর যে জানাজার পরে দাফন সহ সেখানে অবস্থান করে,দাফন কার্য্য সম্পন্ন করে আসে তার জন্য দুইটা ওহুদ পাহাড়ের সমপরিমান নেকী দেয়া হয়।”
আপনারা কি জানেন ওহুদ পাহাড়ের ওজন কতটুকু ? এটা হিসাব করা সম্ভব নয়।
মানুষকে দেখানো নিয়তে নয়,আপনার কোন আত্নীয় মারা গেছে,আপনি যদি না যান তাহলে ঐ আত্নীয়ের লোকজন আপনার উপর রাগ করবেন আপনার সাথে মনোমালিন্য হবে।তাদেরকে খুশী করার জন্য এই নিয়তে নয়,বরং আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনকে সন্তুষ্ট করার জন্য যদি আপনি জানাযায় অংশ গ্রহণ করেন,তাহলে আপনার নেকীর পাল্লা ভরে যাবে।
(৮) যে ব্যাক্তি একটি খেজুরের সমান সদ্কা করা : যে ব্যাক্তি একটি খেজুরের সমপরিমান সদকা করবে,আল্লাহ সে সদকাকে লালন পালন করতে করতে পাহাড়ের সমান করে দেবেন।কেয়ামতের দিন সে নেকীর পাহাড় যখন,তার কাছে নিয়ে আসা হবে,সে আশ্চার্য হয়ে যাবে। সে বলবে, ইয়া রাব্বুল আ’লামিন এটাতো আমার সদকা নয়,আমিতো এত সদকা করি নাই।তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলবেন,হে বান্দা, তোমার মনে আছে ? ছোট একটা খেজুর সদকা করেছ। সেই ছোট্র খেজুরটাকে লালন পালন করতে করতে আজ আমি পাহাড় সমান করেছি।এটা তোমারই সদকা আমি লালন পালন করে এত বড় করেছি। সুতরাং আল্লাহর রাস্তায় একটা খেজুরও যদি খরচ করেন সেটা আপনার নেকীর পাল্লাকে পাহাড় সমান ভারী করে দেবে।
(৯) আল্লাহর পক্ষে রাগ করা : রাগ দু’প্রকার:নিজের জন্য রাগ এবং আল্লাহর পক্ষে রাগ। আজ কাল আমাদের নিজের জন্য মনের মধ্যে রাগ আসে। আল্লাহর পেক্ষে রাগ আসে না। যেমন আপনার সন্তান স্কুলের পড়া রেডি করে নাই বা ঘরের দরকারী কোন বস্তু নষ্ট করে ফেলেছে।আপনি তখন রাগান্বিত হয়ে যান:রাগ করে,বকা দেন,মারেন। আপনার সন্তান যদি স্কুলে বা কোচিং এ যেতে না চায় আপনার রাগ লাগে।পড়া লেখা না করলে আপনার রাগ লাগে।কিন্তু আপনার সন্তান যদি নামাজ না পড়ে তাতে আপনার একটুও রাগ আসে না। অথচ আপনার আমার উচিৎ হলো,আল্লাহর হক নষ্ট করলে তাতে বেশী রাগ আসা।যদি এমন হয়,আল্লাহর পক্ষে রাগ করা হয়,তাহলে আখেরাতে নেকীর পাল্লা ভরে যাবে।
(১০) দ্বীনের দাওয়াত: রাসুল (সা): এর দ্বীন ধর্মের দাওয়াতকে প্রচার করা বিস্তার করা,যা কেয়ামতের দিন নেকীর পাল্লাকে ভরিয়ে দেবে।
আসুন,এসব আমল আমরা নিজেরা করি এবং অন্যরাও যেন করতে পারে,সবাইকে জানিয়ে দিয়ে নেকীর পাল্লাকে ভারী করি-অমিন।

No comments:

Post a Comment

ছোট্ট একটি তাসবিহ কিন্তু সাওয়াব-ফজিলত অনেক বেশি।

উম্মত জননী হজরত জুওয়াইরিয়া (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন আল্লাহর নবী (সা.) ফজরের সময় আমার ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। তখন আমি জায়নামাজে ছিলাম। ত...