Saturday, August 31, 2019

আহলান সাহলান শুভ নববর্ষ মহরম মাস আজ আরবী বৎসরের প্রথম দিন।

মহরম আরবী বৎসরের প্রথম মাস, যা আরবী শব্দ, শাব্দিক অর্থ -সন্মানিত,নিষিদ্ধ ইত্যাদি। পবিত্র কুরানে চারটি মাসকে সন্মানিত বলা হয়েছে, তন্মধ্যে একটি হল মহরম।
*কুরানে এসেছে-
" নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গননার মাস বারটি,আসমানসমুহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সন্মানিত।"(সুরা তাওবাঃ৩৬)
শুধু তাই নয় এই মাসকে হাদীস শরীফে শাহরুল্লাহ বা আল্লাহর মাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে ।
আমরা সকলেই জানি আরবী হিজরী বৎসর চালু হয়েছে আমাদের প্রিয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের মধ্য দিয়ে।তাই এই মহরম মাসের সাথে হিজরতের মহান ঘটনা জড়িত। যেই হিজরতের মধ্য দিয়ে ইয়াসরেবের নাম পরিবর্তন হয়ে মাদীনা হয়েছে। সেই সোনার মাদীনা দেখতেই আশেকরা পাগল। যেখানে রয়েছে রাওজাতুন্নাবী (দঃ)।
মহরম মাসের আরেকটি বিশেষ দিন হল। ""ইয়াওমে আশুরা বা দশ তারিখ দিন"" এই দিনটি বিশেষ কারনেই যুগে যুগে বিভিন্নভাবে পালিত হয়ে আসছে।
এই দিনের রোযা রাখার ব্যপারে অনেক সহিহ হাদীস রয়েছে।
১।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"রমজানের রোজার পরে সবচেয়ে উত্তম রোজা হল আল্লাহর মাস মহরমের রোজা এবং ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হল রাতের নফল(তাহাজ্জুতের) নামাজ"( মুসলিম ,বাবু ফাদলি ছওমী মুহাররাম)
২।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন –"আশুরার দিনের রোজার ব্যপারে আমি আল্লাহর কাছে কামনা করি যে ,তিনি পূর্বের এক বৎসরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।" (ইবনে মাজাহ,তিরমিযী,শুয়াবুল ঈমান)
৩।হযরত ইবনে আব্বাস (রাদিঃ) থেকে বর্নিত ,রাসুলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করলেন,আশুরার দিন ইয়াহুদীদের রোজা পালন করতে দেখলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন আজ কোন দিন যে তোমরা রোজা পালন করছো ? তারা বলল আজ এক মহান দিন যেই দিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসা (আঃ)ও তার সম্প্রদায়কে বিজয় দিয়েছিলেন আর ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে ছিলেন।মুসা (আঃ)আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ে রোজা রাখতেন তাই আমরাও তার অনুসরনে রোজা পালন করি ,তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা (আঃ)-র নিকট বেশি হকদার নিকটবর্তী । অতঃপর তিনি নিজে রোজা রাখলেন ও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। (মুসলিম-বাবু ছাওমী ইয়াওমী আশুরা)
হযরত মুসা (আঃ)ও তার সম্প্রদায় এই দিনেই আল্লাহর রহমতে সমুদ্রের মাঝে রাস্তা হওয়ায় সাগর পার হয়ে গেল,আর ফেরাউনও তার দল বল নিয়ে ডুবে মরল । ঠিক অনরুপ অসংখ্য ঘটনা এই দিনে ঘটেছে বলে বিভিন্ন বর্ননা পাওয়া যায়।
ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী (রঃ)তার কিতাব "লাত্বায়েফুল মায়ারেফ"এ এবিষয়ে বিভিন্ন হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ননা করেছেন যে,আশুরার দিনে আল্লাহ তায়ালা আদম (আঃ)-র তাওবা কবুল করেছেন, এবং এই দিনেই পৃথিবীতে প্রেরন করেছেন।
(দেখুন,লাত্বায়েফুল মায়ারেফঃ-মিন ফাদ্বাহিলি ইয়াওমু আশুরা)
সুরা হুদের ব্যাখ্যায় তাফসীরে দুররুল মান্সুরে আরো কয়েকটি বর্ননা রয়েছে,
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : يوم عاشوراء اليوم الذي تاب الله فيه على آدم واليوم الذي استوت فيه سفينة نوح على الجودي واليوم الذي فرق الله فيه البحر لبني إسرائيل واليوم الذي ولد فيه عيسى صيامه يعدل سنة مبرورة
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)হইতে বর্নিত তিনি বলেন-
আশুরা এমনই একটি দিন, যেই দিন আল্লাহ তায়ালা আদম (আঃ)এর তাওবাকে কবুল করেছেন।এবং যে দিন নুহ (আঃ)এর কিস্তি জুদি নামক পর্বতে থেমেছিল।যেইদিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বনী ইসরাঈলের জন্য সমুদ্রকে দুই ভাগ করে দিয়েছিলেন (মানে সমুদ্র দুই ভাগ হয়ে রাস্তা হয়েছিল)। যেইদিন ঈসা (আঃ)জন্ম গ্রহন করেছিলেন। এই দিনের রোজা এক বৎসরের সমান স্বীকৃ্ত।
(আদদররুল মান্সুর লিসসুয়ুতি)
*এই বর্ননাটা রুহুল মায়ানীতেও উল্লেখ করা হয়েছে।
এই দিনে কারবালার হ্রদয়বিদারক ঘটনা যা ঘটেছিল- যেই ঘটনাটা শুনলে সকলের হৃদয় কেঁদে উঠে ,যা ঘটেছিল কারবালার প্রান্তরে। এই পথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে হৃদয় বিদারক ঘটনা । নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (রাঃ)কে স্বপরিবারে বাহাত্তুর জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল । যারা এই হত্যাকান্ডকে ঘটিয়ে ছিলো তাদের প্রতি রইল ঘৃ্না , আল্লাহর কাছে তাদের যথাযথ শাস্তির জন্য দোয়া করি। পাশাপাশি আমাদের প্রানপ্রিয় নাবী পরিবারের প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমত্ যেন বর্ষিত হতেই থাকে এ দোয়া ও প্রার্থনা থাকবে জীবন ভর।
"রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন –যে হাসান ও হুসাইন (রাদিঃ)কে ভালবাসলো সে যেন আমাকেই ভালবাসলো আর যে তাদেরকে ঘৃণা করল সে যেন আমাকেই ঘৃণা করল" (মুস্তাদরিকে হাকিম)
পরিশেষে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা কামনা করছি।পবিত্র আশুরার সকল বরকত রহমতে প্রার্থনা করছি।আমিন।

No comments:

Post a Comment

ছোট্ট একটি তাসবিহ কিন্তু সাওয়াব-ফজিলত অনেক বেশি।

উম্মত জননী হজরত জুওয়াইরিয়া (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন আল্লাহর নবী (সা.) ফজরের সময় আমার ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। তখন আমি জায়নামাজে ছিলাম। ত...