Wednesday, September 18, 2019

গীবত কাকে বলে ?

গীবত শব্দটি ইসমে মাছদর অভিধানে বিভিন্ন অর্থে ব্যাবহৃত হয়।
১. পরনিন্দা করা,২. কুৎসা রটনা করা,৩. গোপনে সমালোচনা করা
৪. দোষ বর্ননা করা।

কারো অনুপস্থিতে অন্যের কাছে এমন দোষ বর্ননা করা যা সে শুনলে খারাপ লাগে, অপছন্দ করে বা অসন্তুষ্ট হয় তাকেই গীবত বলে। চাই মুখে হোক আর লেখনীতে হউক। কোন মুসলমানের নিকট হউক আর অমুসলিমের নিকট হউক। বর্ণিত দোষ যদি ঐ ব্যক্তির মধ্যে থাকে তবে তা গীবত হবে।আর যদি না থাকে মিথ্যা বানিয়ে বর্ণনা করা হয় তাহলে তা হবে অপবাদ।

রাসুলুল্লাহ (সঃ) একদিন সাহাবায়ে কেরামদের জিজ্ঞেস করলেন তোমরা জান গীবত কাকে বলে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন আল্লাহ ও তার রাসুল (সঃ) ভাল জানেন জবাবে রাসুল (সঃ) ইরশাদ করলেন ‘‘জিকরুকা আখাকা বিমা ইয়াক্রাহু” গীবত হচ্ছে তোমার অপর ভাইয়ের এমন দোষ বর্ণনা করা যা সে শুনলে অসন্তুষ্ট হবে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ বর্ণনাকৃত দোষ যদি তাহার মাঝে থাকে তবে কি গীবত হবে। রাসুল (সঃ) বললেন- যার দোষ বর্ণনা করা হবে তাহার মাঝে যদি এ দোষ বিদ্যমান থাকে তবে তা গীবত হবে আর যদি না থাকে তবে অপবাদ হবে। (মুসলিম)

আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালামে এরশাদ করেন ‘‘ওলা ইয়াখতাব বা’য়দুকুম বা’য়দা’’
–তোমরা একে অপরের গীবত করোনা ।
আবার অনেকে মৃতদের দোষ বর্ণনা করে তাও হারাম। কারন রাসুল (সঃ) বলেছেন-তোমাদের কেউ মারা গেলে তাকে ছেড়ে দাও। তার গীবত করনা। তিনি আরো বলেছেন-তোমরা মৃতদের সদগুন সমুহ আলোচনা কর এবং মন্দ আলোচনা থেকে বিরত থাক।

গীবত শুনা:
কারো গীবত শুনে চুপ থেকে প্রতিবাদ না করা কানের গীবত । কেননা গীবত শুনে চুপ থাকা এবং প্রতিবাদ না করা নিজেই গীবত করার শামিল।

কারন রাসুল (সঃ) বলেছেন- যখন কারো গীবত করা হয় আর তুমি সে মজলিসে বসা থাক তখন তুমি গীবতকৃত ব্যক্তির সাহয্যকারী হও। এভাবে, তুমি তার প্রশংসা শুরু করে দাও যাতে মানুষ তার গীবত হতে বিরত হয় এবং গীবতকারীকে গীবত করা হতে নিষেধ কর। নতুবা মজলিস হতে চলে যাও কেননা চুপচাপ বসে থাকলে তুমিও গীবতকারী গণ্য হবে। যেমন মায়মুন বিন সিয়াহ (রাঃ) নিজের অবস্থার বর্ণনায় বলেন-একদিন আমি ঘুমাচ্ছিলাম স্বপ্নে দেখলাম আমার সামনে এক মৃত হাবশীকে এনে কেউ বলছে “হে মায়মুন তুমি এ হাবশী মৃতকে খাও” আমি বললাম- আমি কেন হাবশীকে খাব। সে বলল- তুমি অমুকের গীবত করেছ। আমি বললাম আল্লাহর কসম আমি তার গীবত করিনি সে বলল – যদিও তুমি গীবত করনি তবে শুনেছ। আর গীবত শুনা আর গীবত করা একই রকম গোনাহ।

খারাপ ধারনা ও গীবত:
কোন কোন নেককার পূণ্যবান লোক সম্পর্কে বিনা কারনে বিনা প্রমাণে সন্দেহ প্রবণ হয়ে খারাপ ধারনা পোষন অন্তরের গীবত।

অঙ্গ প্রত্যঙ্গের গীবত:
হাত,পা,নাক অথবা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে অন্যের দোষ বুঝিয়ে দেয়া যেমন কেউ হাটে বা বাজারে চলছে একজনের সাথে কিছু বেশী কথা বলছে আপনি ইশারা দিয়ে তার মাথা খারাপ বুঝিয়ে দেয়া ও গীবত। বা কেহ মজলিস থেকে উঠে গেল হাতে তার প্রতি ইশারা করা, ঠোট বাকা করা উদ্দেশ্য লোকটি ভাল নয় ইত্যাদি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের গীবত।
জনৈকা রমণী রাসুলুল্লাহ্ (সঃ) এর সান্নিধ্যে আগমন করে,আগন্তুক ছিল খর্বাকৃতির। সে চলে গেলে হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রাঃ) তুচ্ছার্থে তার দিকে ইশারা করলেন। এতে রাসুল (সঃ) বললেন হে আয়শা ! তুমি তার গীবত করলে। (বায়হকী )

গীবত হারাম:
গীবত অকাট্য হারাম এবং এর হারাম হওয়া সুস্পষ্ট দলিল দ্বারা প্রমাণিত। গীবত হারাম হওয়া অস্বীকারকারী কাফের। যে বলবে গীবত হালাল সে কাফের হয়ে যাবে। কেননা গীবত হারাম হওয়া কোরআনের আয়াত ও অসংখ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ পাক কোরআন মজিদে এরশাদ করেন – “তোমরা একে অন্যের গীবত করনা, কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পচন্দ করবে? অবশ্য তোমরা তা অপচন্দই করবে।”

এক সফরে মহানবী (সঃ) হজরত সালমান ফারেসী (রাঃ) কে দুই ধনাঢ্য ব্যক্তির সঙ্গী করে দেন। পথিমধ্যে একদিন মনজিলে অবতরণ করলে ধনী ব্যক্তিদ্বয় কোন কাজে চলে যান এবং সালমান (রাঃ) ঘুমিয়ে পড়েন। তারা দুইজন কাজ শেষ করে এসে জিজ্ঞেস করলেন হে সালমান – খাওয়া দাওয়ার কোন ব্যবস্থা হয়েছে কি? তিনি বললেন আমার ঘুম এসে গেছে। তাই কিছুই প্রস্তুত করতে পারিনি। তারা বললেন যাও ! রাসুল (সঃ) এর নিকট থেকে কিছু খাদ্য নিয়ে আস। সালমান (রাঃ) মহানবী (সঃ) কে বর্ণনা করলে তিনি বললেন আমার ভান্ডার রক্ষক ওসামা’র নিকট যাও এবং কিছু থাকলে নিয়ে আস। তিনি হজরত ওসামা (রাঃ) নিকট গেলে তিনি বললেন-আমার নিকট দেবার মত কিছুই নেই। সালমান (রাঃ) ফিরে গিয়ে তার সফরসঙ্গীদের অবহিত করলেন। এখবর শুনে তারা হজরত ওসামার গীবত করেন। এবং রাসুল (সঃ) এর নিকট সঙ্গীদ্বয় গমন করেন। রাসুল (সঃ) বললেন তোমাদের দাতে গোশতের রংলেগে রয়েছে। তারা বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ আজ আমরা মোটেই গোশত খাইনি। রাসুল (সঃ) বললেন- তোমরা এই মাত্র ওসামা এবং সালমানের গোশত খেয়েছ। কেননা তোমরা উভয়ের গীবত করেছ। আর কারো গীবত করা গোশত খাওয়ার নামান্তর। তখন আল্লাহ পাক উপরোল্লেখিত আয়াত নাজিল করেন।

গীবতকে গোশত ভক্ষনের সাথে তুলনার কারন:
কোরআনের আয়াত ও হাদীসে গীবতকে গোশত ভক্ষনের সাথে তুলনার কারন হচ্ছে কারো গোশত ভক্ষনে যেমন তাকে চরম হেয় অপদস্থ করা হয় অনুরুপ গীবত দ্বারাও তার সম্মান মর্যাদা চুর্ণ বিচুর্ণ করা হয়। সুতরাং যখন কারো গীবত করা হল তখন যেন তার গোশতই ভক্ষন করা হল। এ কারনে গীবতকে গোশত ভক্ষনের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অথবা মানুষ বা কোন মৃত জীবের গোশত ভক্ষন করা যেমন হীন তেমনি গীবত ও অত্যন্ত ঘৃনিত বিষয়।

হাসরে অন্যের গীবতকারীর অবস্থা:
হাসরের ময়দানে মানুষ যখন আল্লাহর দরবারে হাজির হবে,তখন সবাই নিজেদের গোনাহের কথা স্মরণ করবে। সেদিন কারো কোন সাহায্যকারী থাকবেনা। কেউ বলবে এ আমার অধিকার হরন করেছে কেউ বলবে এ আমার গীবত করেছে। আল্লাহ পাক ন্যায় বিচার করবেন তিনি প্রত্যেক দাবীদারকে সন্তুষ্ট করবেন। যারা গীবত করেছে গীবতকারীর আমলনামা থেকে সমপরিমান নেকি নিয়ে গীবতকৃত ব্যক্তির আমল নামায় দেয়া হবে এবং গীবতকৃত ব্যক্তির অপরাধগুলো গীবতকারীর আমলনামায় দেয়া হবে।

গীবত যেনার চাইতেও ভয়ংকর:
গীবতকে যেনার চাইতে ও ভয়ংকর বলার কারন হচ্ছে যেনা করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ মাফ করে দিতে পারেন যেহেতু সেটি আল্লাহর হক্ব কিন্তু গীবত করা, কাউকে গালি দেয়া, কারো প্রতি জুলুম করা এগুলো বান্দার হক্ব তাই বান্দা মাফ করে না দেয়া পর্যন্ত মাফ হবেনা ।

হজরত সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ সাকাফী হতে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসুল (সঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম – হে আল্লাহর রাসুল (সঃ) আমার জন্য যে সকল বস্তু ভয়ংকর মনে করেন তন্মধ্যে সর্বাধিক ভয়ংকর কোনটি? বর্ণনাকরী বলেন-তখন রাসুল (সঃ) স্বীয় জিহ্বা ধরলেন এবং বললেন- এটি অর্থাৎ জিহবা। (তিরমিযী)

এক যুবক আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারক (রঃ) এর সমীপে এসে
বলতে লাগল আমি একটি বড় গোনাহ করেছি তিনি বললেন বল কি গোনাহ করেছো? যুবক বলল আমি যেনা করেছি তিনি বললেন আলহামদুলিল্লাহ ! তুমি গীবত তো করনি । কেননা গীবত যেনার চাইতে ও বড় গোনাহ । (তাজকেরাতুল আউলিয়া)

এক মহিলা এক মাদরাসায় এসে মাদরাসা প্রধানকে বলল, আমি একটি মাসআলা জিজ্ঞেস করতে চাই, কিন্তু লজ্জার কারনে তা মুখে আনতে পারছিনা। মাদরাসা প্রধান বললেন, তোমার মাসআলা বর্ণনা কর লজ্জা করনা। তখন মহিলা বলল- আমি যেনা করেছি এবং গর্ভ ধারন করেছি অতঃপর যেনার ফসল যে ছেলে জন্ম নিয়েছে তাকে হত্যা করেছি। এ বর্ণনা শুনে উপস্থিত সকল বিস্মত হয়। মাদরাসা প্রধান বললেন, হে লোক সকল ! তোমরা এ গোনাহে বিস্ময় প্রকাশ করেছো জেনে নাও গীবতের গোনাহ এর চাইতে বড়। কেননা যেনাকার গোনাহ হতে তওবা করলে আল্লাহ তওবা কবুল করেন। কিন্তু গীবতকারী তওবা করলেও আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করেন না যতক্ষন না যার গীবত করা হয়েছে সে মাফ করে। ( খাযানাতুর রেওয়ায়াত)

শেখ সাদীর ঘটনা:
এক রাতে শেখ সাদী তিনি পিতার নিকট বসে কোরআন তিলাওয়াত করছিলেন। আর কিছু লোক পড়ে ঘুমাচ্ছিল । শেখ সাদী পিতাকে বললেন লোক গুলোর কি হয়েছে এভাবে পড়ে ঘুমাচ্ছে। যদি না ঘুমিয়ে জেগে জেগে নামাজ আদায় করত। শেখ সাদীর পিতা বললেন বাবা তুমিও যদি কোরআন তেলাওয়াত না করে এভাবে ঘুমিয়ে থাকতে তবে অনেক ভাল হত কারন গীবত থেকে বেঁচে থাকতে। অন্যের দোষ বর্ণনা থেকে মুক্তি পেতে।

কিয়ামতে গীবতকারীর সাথে যে ব্যবহার করা হবে:
হজরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন- যে দুনিয়ায় নিজের ভাইয়ের গোশত খেয়েছ গীবত করেছ আখেরাতে গীবতকারীর সামনে সে গোশত উপস্থাপন করা হবে। তাকে আদেশ করা হবে, যেভাবে দুনিয়ায় তুমি তার গোশত খেয়েছ গীবত করেছ, এখনও অনুরুপ তুমি তার গোশত খাও। গীবত কারী সে গোশত মুখে দিতেই তার মুখ বিকৃত হয়ে যাবে। এতে সে অপমাণিত ও অপদস্থ হবে। ( আততারগীব ওয়াততারহীব)

হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর উপদেশ:
হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেন- যখন তুমি তোমার কোন বন্ধুর গীবত করেতে ইচ্ছা করেবে তখন নিজের দোষের কথা স্মরণ কর। নিজের গোনাহ সমুহ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা কর। তাহলে গীবত থেকে নাজাত পাবে এবং জান্নাত পাবে। যদি নিজের দোষ সমুহ না দেখে অন্যের দোষ সমুহ আকড়ে ধর তাহলে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতে তোমার দোষ সমুহ প্রকাশ করে দেবেন। (এহিয়াউল উলুম)

গীবত ফাসেক পাপাচারীর মেহমানদারী:
হজরত আবু এমরান (রঃ) বললেন-“গীবত ফাসেক পাপাচারীদের মেহমানদারী এবং নারীকুলের চারণভূমি, মানুষ কুকুরদের তরকারি এবং আল্লাহ ভীরুদের দুরত্ব অবলম্বনের ক্ষেত্র। ’’

গীবত ফাসেক পাপাচারীদের মেহমানদারী- বলার কারণ ফাসেক পাপাচারীরা একত্রিত হলে গীবতের বাজার জমে। বর্তমানকালে বিশিষ্টজনরা যখন খেতে বসেন তখন অনেক গল্পকাহিনী বর্ণনা করেন যা গীবতে পরিনিত হয়। একে অণ্যের সাথে মিলিত হলে মানুষের গীবত দ্বারা পরস্পরের মেহমানদারী করে, দোষত্র“টি প্রকাশ করে, অপমান – অপদস্থ করে গীবত দ্বারাই তাদের মন সন্তুষ্ট হয় । সুতরাং গীবত ফাসেক পাপাচারীদের মেহমানদারী।

রমণীকুলের চারণভূমি বলার কারন:
এ উক্তির মর্ম হল চতুষ্পদ জন্তু যেমন ঘাস পেলে খুশী হয়ে দৌড়ায় তেমনি নারীরাও কোন মজলিসে কারো গীবত হচ্ছে দেখতে পেলে ঝটপট গিয়ে শরীক হয়।

জাহান্নামে গীবতকারীদের খাজলী হবে:
জাহান্নামে গীবতকারীদের ভীষণ খাজলী হবে। খাজলীর কারনে তাদের চামড়া নিঃশেষ হয়ে যাবে। হাড় বেরিয়ে আসবে। তখন ধ্বনিত হবে হে লোক সকল! এ খাজলীর কারনে কি তোমাদের কষ্ট হচ্ছে? জাহান্নামীরা জবাব দিবে হ্যাঁ। তাদেরকে জবাব দেয়া হবে, তোমাদের এ কষ্টের কারন, দুনিয়ায় তোমরা মানুষদেরকে হেয় পতিপন্ন করতে,অপমান -অপদস্থ করতে, মুসলমানদেরকে কষ্ট দিতে তাই।

গীবত মোনাফেকী:
হজরত ইবনে উমর (রাঃ) এক ব্যক্তিকে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের গীবত করতে শুনে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, যদি হাজ্জাজ এখানে উপস্থিত থাকতো তবে তুমি কি তার দোষ বর্ণনা করতে ? সে বলল না। তখন তিনি বললেন – মানুষের সামনে প্রশংসা এবং পিছনে দূর্নাম রটনা রাসুলুল্লাহ (সঃ) বিদ্যমান থাকা অবস্থায় সাহাবায়ে কেরাম এ আচরণকে মোনাফেকী মনে করতেন। (এহইয়াউল উলুম)

মিরাজের ঘটনা:
রাসুলুল্লাহ (সঃ) এরশাদ করেন- যখন আমি মিরাজে গমন করি, তখন চলার পথে বিস্ময়কর এবং ভয়ংকর দৃশ্য সমুহ অবলোকন করি। তা হল -এক জায়গায় একদল লোককে দেখতে পেলাম, তাদের নোখগুলো তামার। তারা এ তামার নোখ দ্বারা নিজেদের মুখমন্ডল এবং বক্ষ আচড়াচ্ছে। আমি জিব্রাইল (আঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন-এরা দুনিয়ায় মানুষের গোশত খেত (গীবত করত)।

গীবত ও চোগলখোরীর মধ্যে পার্থক্য:
দুই ব্যক্তির মধ্যে ঝগড়া মনোবাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একজনের কথা অন্য জনের নিকট বর্ননা করা হচ্ছে চোগলখোরী। যেমন – কাউকে এরুপ বলা অমুক তোমাকে মন্দ বলে, তোমার নিন্দাবাদ করে ।
হজরত হোজায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন-আমি রাসুলুল্লাহ (সঃ) কে বলতে শুনেছি চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না (বুখারী)

আর গীবত হচ্ছে কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ বর্ননা করা। এ ক্ষেত্রে ঝগড়া, ফ্যসাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্য না ই থাকুক। অতএব যেখানে চোগলখোরী থাকবে সেখানে গীবতও থাকবে।

হজরত সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি আমার জন্য তার দু-চোয়ালের মধ্যস্থিত স্থানের এবং দু-পায়ের মধ্যস্থিত স্থানের জিম্মাদার হতে পারবে আমি তার জন্য বেহেশতের জিম্মাদার হব। (বুখারী)
রাসুল (সঃ) এরশাদ করেছেন – “লা তাবাখাজু ওলা তাদাবারু ওলা তানাফাসু ওকুনু ইবাদাল্লাহি ইখওয়ানা”
— তোমরা পরস্পরে ঈর্ষা বিদ্বেষ পোষন করনা, গীবত করনা, দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়োনা, আর আল্লাহর বান্দারা সবাই ভাই ভাই হয়ে যাও।

গীবতের ক্ষতি:
গীবতের কারনে দুনিয়া আখেরাতের ক্ষতি হয়
১.দোয়া কবুল হয়না
যে বেশী গীবত করে সে খুব কমই অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়। এজন্য তার দোয়া কবুল হয়না এবং তার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়না।
২.ফকীহ আবুল লায়স সমরকন্দি (রঃ) তাম্বীহুল গাফেলীন গ্রন্থের ঈর্ষা বিদ্ধেষ অধ্যায়ে উল্লেখ করেন – তিন ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়না।
১. হারাম ভক্ষণকারী
২.অধিক গীবতকারী
৩. মুসলমানের সাথে বিদ্ধেষ পোষন কারী বা কৃপনতা কারী।
লোকেরা হজরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) কে দোয়া কবুল না হওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন-তোমাদের অন্তর মৃত আর আটটি কারনে তোমাদের অন্তরের সজীবতা রাখেনী তা হচ্ছে।
১. তোমরা আল্লাহ তায়ালার মহত্ব সম্পর্কে জান, তার শক্তি কুদরত সম্পর্কে অবগত অথচ তার নির্দেশ পালনে ত্র“টি কর।
২. তোমরা কোরআন তিলাওয়াত কর অথচ কোরআনের বিধান অনুযায়ী আমল করনা ।
৩. মুখে নবীর মহব্বত প্রকাশ কর অথচ সুন্নাহ ভিত্তিক জীবন পরিচালনা করনা।
৪. তোমরা মুখে বল মৃত্যুকে ভয় করি অথচ এবাদতের মাধ্যমে তার প্রস্তুতি গ্রহন করনা।
৫. আল্লাহ তায়ালা বলেছেন শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্র“ তাকে শত্র“ রুপেই গ্রহন কর অথচ তোমরা গোনাহের কাজ করে শয়তানকে বন্ধুরুপে গ্রহন করেছ।
৬. তোমরা মুখে বল আমরা জাহান্নামকে ভয় করি অথচ সদা সর্বদা গোনাহের কাজ করে নিজেদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করছো।
৭. তোমরা জান্নাতে যাওয়ার কামনা বাসনা পোষণ কর, অথচ এজন্য কোন পাথেয় সংগ্রহ করনা।
৮. যখন তোমরা জাগ্রত হও তখন নিজের দোষ পিছনে ফেলে দাও নিজের দোষের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে অন্যের দোষ ত্র“টি নিজের সামনে রাখ, মানুষের নিন্দাবাদ কর, দূর্ণাম রটাও। এসব কারনে তোমাদের প্রতি রহমত নাজিল হয়না । ফলে তোমাদের দোয়াও কবুল হয়না।
৩.আমলনামা থেকে নেকী কমে যায়:
হজরত আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) বলেন- কেয়ামতের দিন যখন প্রত্যেকের হাতে আমলনামা দেয়া হবে, তখন প্রত্যেকেই নিজ নিজ আমলনামায় নেকী দেখে খুশী হবে। আর যখন ওটার প্রতি দৃষ্টি পড়বে তখন অস্থির হবে। কিছু লোক নিজেদের আমলনামায় এমন নেকীসমূহ দেখতে পাবে যা তারা দুনিয়ায় করেনি। তারা আল্লাহতাআলাকে বলবে, ইয়া আল্লাহ! এসব নেক কাজ তো আমরা করিনি। এগুলো কিভাবে আমাদের আমাদের আমলনামায় অন্তর্ভুক্ত হল? আল্লাহ বলবেন, যদিও তোমরা এসব নেক কাজ করনি, কিন্তু যারা তোমাদের গীবত করেছে, তাদের আমলনামা থেকে এসব নেকী মিটিয়ে তোমাদের আমলনামায় লেখে দেয়া হয়েছে আর তাদের গীবত সম্পর্কে তোমরা অবহিত ছিলে না।
৪. আমলনামায় পাপের আধিক্য হওয়া:
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন তোমরা গীবত থেকে বেচেঁ থাক, কেননা তাতে তিনটি বিপদ রয়েছে এক গীবতকারীর দোয়া কবুল হয়না। দুই – তার কোন নেক কাজই কবুল হয়না। তিন- তার আমলনামায় পাপাধিক্য হয়।
হজরত ইমাম গাজ্জালী (রঃ) বলেন- যদি তুমি দিনে রোজা রাখ আর রাতে এবাদত কর অতঃপর যদি লক্ষ্য কর কি পরিমান গীবত করেছ তবে দেখবে তোমার দিনের রোজা ও রাতের এবাদত এর চেয়ে পাপের বোঝা বেশী হয়ে গেছে। তাই অন্যের অধিকারের বোঝা থেকে নিজেকে বাচিঁয়ে রাখ।

৫.পূণ্য কর্ম সমুহ কবুল না হওয়া:
রাসুল (সঃ) এরশাদ করেন-আগুন এত তাড়াতাড়ি শুকনো বস্তুর উপর প্রতিক্রিয়া করেনা, যত তাড়াতাড়ি পূণ্য কর্মসমুহের উপর গীবতের প্রতিক্রিয়া হয়।
হজরত মোয়াজ (রাঃ) এক দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন উক্ত হাদীসে রাসুল (সঃ) এরশাদ করেন- হে মোয়াজ ! যারা আমলের সংরক্ষক এবং যেসব ফিরিশতা আমল লিপিবদ্ধ করেন কখনো এমন হয় যে, ফিরিশতা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের নেক আমল সমুহ আসমানে নিয়ে যান, আর আমলসমুহ সূর্যের মত চমকিত হয়, আমলবাহী ফিরিশতা প্রথম আসমানে উপনীত হয়ে তা দ্বিতীয় আসমানে নিয়ে যেতে চান, তখন প্রথম আসমানে আল্লাহর নিযুক্ত ফেরেশতা বলেন এসব আমলকারীর মুখের উপর ছুড়ে মার এবং তাকে ক্ষমা করা হয়নি বলে সংবাদ দাও কেননা সে মুসলমানদের গীবত করেছে। সুতরাং তাহার আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হয়নি।
(তাম্বীহুল গাফেলীন -তাফাক্কুর অধ্যায়)

৬. কিয়ামতে অধিকারের দাবীদারের ফরিয়াদ:
একদিন জনৈক ব্যক্তি যাহেদ (রঃ) এর সম্মুখে হাজ্জাজের গীবত ও তার জুলুম অত্যাচারের বর্ণনা করতে শুরু করে। তখন যাহেদ (রঃ) বললেন- আল্লাহ তায়ালা যথার্থ ন্যায় বিচারক। তিনি যেমন হাজ্জাজ থেকে অত্যাচারীতদের বিনিময় গ্রহন করবেন তেমনী হাজ্জাজের গীবতকারীদের কাছ থেকে ও তার গীবতের বিনিময় গ্রহন করবেন যখন সে তা দাবী করবে।

৭. গীবতকারীকে এক হাজার বৎসর দাড় করিয়ে রাখা হবে:
কিয়ামতের দিন আটটি মনজিল হবে এবং চতুর্থতম মনজিলে গীবতকারীকে এক হাজার বৎসর দাড় করিয়ে রাখা হবে।

৮. কেয়ামতে দুঃখ লজ্জায় পতিত হওয়া:
কিয়ামতের আদালতে যখন কেউ কারো উপর দাবী করবে যে, সে আমার গীবত করেছে তখন আল্লাহ তায়ালা এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেন গীবতকারী স্বীকার করবে এবং জন সম্মুখে লজ্জিত হবে।

কেয়ামতে গীবতকৃতের গোশত ভক্ষন:
কিয়ামতে যার গীবত করবে তাকে মৃতরুপে উপস্থাপন করা হবে এবং গীবতকারীকে হুকুম দেয়া হবে জীবদ্দশায় তুমি তার গোশত খেয়েছ এখন মৃত্যুর পরও তুমি তার গোশত ভক্ষন কর। সুতরাং গীবতকারী মৃতের গোশত খাবে এবং মুখ অত্যন্ত বিকৃত করবে।
কিয়ামতের দিন নিজের গোশত ভক্ষন

রাসুল (সঃ) মেরাজ হতে প্রত্যাবর্তন করে এরশাদ করেন “যখন আমি মেরাজে গমন করি , তখন কিছু লোককে দেখতে পেয়েছি যাদের পার্শ্বদেশ হতে গোশত কেটে মুখে নিক্ষেপ করা হচ্ছে আর ফেরেশতাগন তাদের বলছেন যেভাবে দুনিয়ায় তোমরা আপন ভাইয়ের গোশত ভক্ষন করতে এখন তেমনি নিজের গোশত ভক্ষন কর । আমি জিজ্ঞেস করলাম হে জিব্রাইল (আঃ) এরা কারা ? তিনি বললেন এরা আপনার উম্মতের সেসব লোক যারা মানুষের গীবত করত।

জাহান্নামে বানরে পরিনত:
নুজহাতুল মাজালেস গ্রন্থে হজরত হাতেম আসাম্ম (রঃ) এর উক্তি তিনি বলেন-গীবতকারী জাহান্নামে বানরে পরিাণত হবে।

গীবতে শয়তান খূশী হয়:
একদিন হজরত ঈসা (আঃ) ইবলীস শয়তানকে দেখতে পেলেন তার এক হাতে মধু এবং আরেক হাতে ছাই তিনি এর কারন জিজ্ঞেস করলে সে বলল, এ ছাই আমি এতিমদের চেহারায় নিক্ষেপ করি , যাতে তাদের চেহারা বিশ্রী হয়ে যায় মানুষ তাদের থেকে দুরত্ব অবলম্বন করে। আর মধু গীবতকারীদের মুখে নিক্ষেপ করি কেননা তাদের প্রতি আমি সন্তুষ্ট ও প্রসন্ন চিত্ত হয়ে থাকি ।

আল্লাহ ও রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করা হয়:
যেহেতু আল্লাহ ও তার রাসুল (সঃ) গীবত নিষিদ্ধ করেছেন সেহেতু গীবতের মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসুলের নিষেধের বিরুদ্ধ চারণ করা হল। আর যারা আল্লাহ ও রাসুলের বিরুদ্ধাচরন করে তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে ধ্বংস অনিবার্য।

গীবতের কারনে রোজা মাকরুহ হয়:
গীবতকারী রোজাদার হলে তার রোজা মাকরুহ হয়ে যায়। বরং হাদীস গ্রন্থ মেশকাত শরীফের ভাষ্য আশেয়াতুল লামায়েতে বলা হয়েছে গীবতের কারনে রোজা নষ্ট হয়ে যায় ।
গীবতের কারনে রাসুল (সঃ) পুনরায় রোজা রাখার নির্দেশ দেন দুই রোজাদার জোহর কিম্বা আসরের নামাজ রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সাথে আদায় করলেন আসর নামাজ পরে তিনি তাদেরকে বললেন তোমরা যাও পুনরায় অজু কর এবং নামাজ আদায় কর। আর তোমাদের রোজা পূর্ণ করে অন্য কোন দিন রোজা ক্বাজা কর তারা আরজ করল হে আল্লাহর রাসুল (সঃ) কেন ক্বাজা করব? রাসুল (সঃ) বললেন-কেননা তোমরা অমুকের গীবত করেছ। (বায়হকী- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।)

গীবতের কারন:
১.ক্রোধ-
মানুষ কারনবশত কারো উপর ক্রুদ্ধহলে গীবত করে।
২.বংশ গৌরবঃ
নিজের বংশকে উত্তম মনে করে অন্যের বংশের গীবত করা ।
৩.এবাদতের অহংকার-
নিজেকে নেক কাজের কাজী মনে করে অহংকার করা, নিজেকে পুত পবিত্র ও মোত্তাকী ভাবা এবং অন্যকে হেয় করতে গীবত করা ।
৪.সাথীদের অনুসরণ করা-
বন্ধুজন বসে গল্প গুজব কওে, গীবত কওে, হাসিঠাট্্রা করে তাই অনেকেই মনে করেন আমিও সেখানে যাই দু চারটা কিস্সা কাহিনী শোনাই।
৫.বদকার আলেমদের অনুসরণ-
কিছু কিছু আলেমরা নিজের ইলিম ও বুজুর্গী জাহির করতে গীবত করেন। এতে অনেকেই ভাবেন হুজুররা গীবত করছেন তো আমরাও করি।
৬.ঈর্ষা-
মানুষ যখন অন্তরে কারো প্রতি ঈর্ষা পোষন করে তখন সে সদা সর্বদা ঈর্ষিত ব্যক্তির গীবত করে।

গীবতের পরিণাম:
১. গীবত দ্বারা পারস্পারিক ভালবাসা,মহব্বত ও ভ্রাতৃত্ববোধ বিনষ্ট হয়।
২. সামাজিক জীবনে ঘৃনা, হিংসা ও শত্র“তার উন্মেষ ঘটে।
৩. অনেক সময় শত্র“তা ও মারামারি সংঘটিত হয়।
৪. সামাজে শান্তি শৃংখলা ও ভারসাম্য বিনষ্ট হয়।
৫. আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন।

গীবতের কাফ্ফারা:
হজরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেছেন- গীবতের কাফ্ফারা হলো তুমি যার গীবত করেছ তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। এরুপ বলবে হে আল্লাহ আমাকে ও তাকে ক্ষমা করুন। (বায়হকী দাওয়াতুল কবীর)

গীবতের কাফ্ফারার বিধান:
গীবতকারী নিজের জন্য এবং তার জন্য দোয়া করবে। তার ক্ষমা প্রার্থনা করবে। মাসআলার প্রকৃত রুপ এমন
১. যার গীবত করা হয়েছে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। পরে দোয়া ও ক্ষমা চাইবে।
২. যদি সে ব্যক্তি দুরে থাকে সরাসরি তার নিকট ক্ষমা চাওয়া সম্ভব নয় তখন এভাবে দোয়া করবে “আল্লাহুমাগফিরলি লি অলিমান ইবতাখতাহু”
৩. যদি সে মৃত্যু বরণ করে থাকে তবে শুধু ইসতেগফার করবে।



যেই অবস্থায় আছেন:সুখে-দু:খে,পেরশানীতে,দুর্দিনে-সুদিনে সর্বাবস্থায় বলুন:আল্হামদুলিল্লাহ।শোকর গোজার হোন,শান্তি পাবেন।আল্লাহ আপনাকে আরো দেবেন,যদি বিরক্তি প্রকাশ করেন:তবে অপেক্ষা করছে-কঠিন শাস্তি।


(১) #মুরগী ডিম দেয়। একটি ডিমের দাম মাত্র দশ টাকা। কিন্তু ডিম দিয়েই 'খকখক' আওয়াজ করে সারা বাড়ির লোকদের জানিয়ে দেয় সে 'ডিম' প্রসব করেছে। অথচ ঝিনুক। লক্ষ টাকার মুক্তো প্রসব করে।নিরবে, নিভৃতে থাকে। তুমি ঝিনুকের মত দামি হতে চাও? ক্ষুদ্র আমল করে মানুষকে জানিয়ে দেয়ার ঘৃণ্য মানসিকতা পরিহার কর।

(২) #বৃষ্টির পানি দিয়ে ঝিনুকের পেটে তৈরি হয় মুক্তো। আর এই পানি গ্রহণের জন্য সে সময় বাছাই করে আমাবশ্যার রজনী। যখন চারিদিকে বিরাজ করে ঘুটঘুটে অন্ধকার। তুমি মালিকের নৈকট্য চাও?
ওঠে যাও শেষ রাতে। যখন দুনিয়ার তামাম মাখলুকাত ঘুমের ঘোরে আচ্ছন্ন। লুটে পড়ে যাও সিজদায়।

(৩) #ঝিনুক মাত্র এক ফোঁটা বৃষ্টির জন্য দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অপেক্ষা করে। কখনো সে বিরক্ত হয়না। ধৈর্য্যহারা হয় না। তুমি জীবনে উন্নতি করতে চাও? 'সবর' কে গলার মালা হিসেবে গ্রহণ কর। কখনো কোন কাজে বিরক্তির কোন ভাব যেন তোমার চেহারায় ফোটে না ওঠে।

(৪) #ঝিনুক একফোঁটা বৃষ্টিজল নিয়েই সে তৃপ্ত থাকে। তার হাজার ফোঁটার দরকার হয়না। তুমি জীবনে সুখী হতে চাও? 'কানাআত' তথা অল্পে তুষ্ট থাকো। কখনও হা-হুতাশ কর না। যে কোন অবস্থায় থাকোনা কেন, সদা সর্বদা আলহামদুলিল্লাহ্ বলো। শান্তির জিন্দেগী লাভ করবে।  ইনশা আল্লাহ্।

Thursday, September 12, 2019

পথে চলতে চলতে জিকির করার ফজিলত।

আল্লাহ জিকির ছাড়া অন্য কথা বেশী বলা হৃদয় কঠোর হয়ে যাওয়ার একটি কারণ। আর এমন হৃদয় আল্লাহর নিকট থেকে অনেক দূরে। (তিরমিযী হা/৩৩৮০)


আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহর কিছু ফিরিশ্তা আছেন, যাঁরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে-ফিরে আহলে জিকির খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন কোন সম্প্রদায়কে আল্লাহর জিকিররত অবস্থায় পেয়ে যান, তখন তাঁরা একে অপরকে আহবান করে বলতে থাকেন, ‘এস তোমাদের প্রয়োজনের দিকে।’ সুতরাং তাঁরা (সেখানে উপস্থিত হয়ে) তাদেরকে নিজেদের ডানা দ্বারা নিচের আসমান পর্যন্ত বেষ্টিত করে ফেলেন। অতঃপর তাঁদেরকে তাঁদের প্রতিপালক জানা সত্ত্বেও তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমার বান্দারা কি বলছে?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘তারা আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছে, আপনার মহত্ত্ব বর্ণনা করছে, আপনার প্রশংসা ও গৌরব বয়ান করছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি আমাকে দেখেছে?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! তারা আপনাকে দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘কি হত, যদি তারা আমাকে দেখত?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘যদি তারা আপনাকে দেখত, তাহলে আরো বেশী বেশী ইবাদত, গৌরব বর্ণনা ও তসবীহ করত।’ আল্লাহ বলেন, ‘কি চায় তারা?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘তারা আপনার কাছে জান্নাত চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জান্নাত দেখেছে?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে তার জন্য আরো বেশী আগ্রহান্বিত হত। আরো বেশী বেশী তা প্রার্থনা করত। তাদের চাহিদা আরো বড় হত।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি থেকে পানাহ চায়?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘তারা দোযখ থেকে পানাহ চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি দোযখ দেখেছে?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে বেশী বেশী করে তা হতে পলায়ন করত। বেশী বেশী ভয় করত।’ তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি তাদেরকে মাফ করে দিলাম।’

ফিরিশ্তাদের মধ্য থেকে একজন বলেন, ‘কিন্তু ওদের মধ্যে অমুক ওদের দলভুক্ত নয়। সে আসলে নিজের কোন প্রয়োজনে সেখানে এসেছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘(আমি তাকেও মাফ করে দিলাম! কারণ,) তারা হল এমন সম্প্রদায়, যাদের সাথে যে বসে সেও বঞ্চিত (হতভাগা) থাকে না।
(মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ৭৩৭৬, বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৬৪০৮, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৬৮৯, তিরমিযী হা/৩৬০০)

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার পথে জুমদান পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে চলছিলেন, তখন তিনি বললেন, তোমরা চলতে থাক এই যে জুমদান পাহাড়। মুফাররিদরা অগ্রগামী হয়েছে। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মুফাররিদরা কারা? তিনি বললেন, ঐসব নারী ও পুরুষ, যারা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৬৭৬

Saturday, September 7, 2019

ঋন থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

অনিবার্য কারণে ঋণ পরিশোধে অপারগতা দেখা দিলে মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া কিছুতেই উচিত নয়। নির্ধারিত সময়ের আগেই অবহিত করতে হবে ঋণদাতাকে। সেই ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করতে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে পার্থিব প্রচেষ্টার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করতে হবে।

তিরমিজি শরিফের এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, একবার হজরত আলী (রা.)-এর কাছে এক ব্যক্তি তার ঋণ পরিশোধের জন্য কিছু সাহায্য চাইলেন। এসময় হজরত আলী (রা.) তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে কয়েকটি শব্দ শিক্ষা দেব না, যা আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন? যদি তুমি এটা পড় তাহলে আল্লাহই তোমার ঋণমুক্তির ব্যাপারে দায়িত্ব নিবেন। যদি তোমার ঋণ পর্বতসমানও হয়।

এরপর হজরত আলী (রা.) ওই ব্যক্তিকে বললেন পড়-

اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكِ عَمَّنْ سِوَاكَ

উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মাক ফিনী
বি হালালিকা
আন হারামিকা,
ওয়া আগনিনী
বি ফাজলিকা
আম্মান সিওয়াকা।

অর্থ: হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট কর। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী করো না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে স্বচ্ছলতা দান কর।

একবার হযরত আলী রাযি.-এর কাছে এক ব্যক্তি তার ঋণ পরিশোধের জন্য কিছু সাহায্য চাইলেন। এসময় আলী রাযি. তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে কয়েকটি শব্দ শিক্ষা দেব না, যা আমাকে রাসূলুল্লাহ ﷺ শিক্ষা দিয়েছেন? যদি তুমি এটা পড় তাহলে আল্লাহই তোমার ঋণমুক্তির ব্যাপারে দায়িত্ব নিবেন। যদি তোমার ঋণ পর্বতসমানও হয়।

এরপর আলী রাযি. ওই ব্যক্তিকে উক্ত দোয়া পড়তে বলেছিলেন। (তিরমিযি ৩৫৬৩, আহমদ ১৩২১)

২. «

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ».

উচ্চারণ:
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি,
ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি,
ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি,
ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।

অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।”

হযরত আনাস রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূল ﷺ চিন্তাযুক্ত অবস্থায় উক্ত দোয়া পড়তেন। (বুখারী ২৮৯৩)

ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার কাছে ঋণমুক্তির জন্য সাহায্য কামনা করলে, আশা করা যায় আল্লাহতায়ালা ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে সব ধরনের ঋণ থেকে মুক্ত করবেন।

জাযাকাল্লাহু খায়ের।

Friday, September 6, 2019

১০টি ছোট ছোট আমল কেয়ামতের দিন নেকির পাল্লাকে ভরে দিবে।

আ’মল সমূহ অতি ছোট কিন্তু নেকীর পাল্লাকে ভরিয়ে দেবে,আর সে পাল্লা কত বড় আপনারা কি জানেন ? কেয়ামতের দিন যে পাল্লা তাতে যদি সাত আসমান এবং সাত জমিন এনে ঐ পাল্লা সমূহের একটি পাল্লায় রাখা হয় তাহলে একটি পাল্লাও ভরবে না। সে বিশাল পাল্লাকে ভরিয়ে দেবে অতি ছোট ছোট দশটি আ’মল।

(১) কলেমা লা-ইলাহা ইল্লাহ :
===================
এই কলেমা ব্যাতীত মানুষের দুনিয়াতেও নিষ্কৃতি নাই আখেরাতেও নিষ্কৃতি নাই। কেয়ামতের দিন এক বান্দার কোন নেকী হবে না,সে খুবই পেরেশান হবে। তখন আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন বলবেন:পেরেশান কেন পেরেশান হইও না।তোমার একটি আমল আমার কাছে আছে।ফেরেশতাদের নির্দশ দেয়া হবে,তারা ঐ আমলে একটি কার্ড ছোট একটি বতাকা(বতাকা অর্থ কার্ড)নিয়ে আসবে।ঐ কার্ডখানি এনে যখন মিজানের পাল্লায় রাখা হবে: এক পাশে তার গুনাহের বোঝার পাল্লা অপর পাশে তার নেকীর পাল্লা । যেখানে কোন নেকী থাকবে না। আল্লাহর নির্দশে তখন নেকীর পাল্লায় ঐ কার্ডখানি রাখা হবে- সেটা তার সমস্ত গুনাহের চাইতে ওজনে বেশী হবে। সুবহানআল্লাহ্। ওটা কিসের কার্ড জানেন ? সেটা হলো কলেমা: লা ইলাহা ইল্লাহর কার্ড। সেখানে লেখা থাকবে - লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। সেই ছোট কার্ডটি তার নেকীর পাল্লাকে ভরে দেবে। এবং আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন নির্দশ দিবেন,তাকে জান্নাত দেয়ার জন্য। সুবহানআল্লাহ্ ।

(২) আলহামদুলিল্লাহ্ :
===============
এটাও খুব ছোট আমল,কিন্তু কেয়ামতের ময়দানে সাত আসমান সাত জমিন যে পাল্লাকে ভরতে পারে না,সে পাল্লাকে ভরিয়ে দেবে।
যে আল্লাহর ফায়সালায় রাজি হবে,আল্লাহ তাকে যে হালতে রেখেছে,তাতে সে খুশী হয়ে বলে দেয়:আলহামদুলিল্লাহ্। সে যদি গরীব হয়,তাতেও সে বলে:আলহামদুলিল্লাহ্। সে যদি অসুস্থ্য হয় তাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে,আপনি কেমন আছেন ? সে বলে: আলহামদুলিল্লাহ্।সকল প্রশংসা আমার প্রভুর জন্য,আমার আল্লাহর জন্য,আমি ভাল আছি।কারন সে অন্যের তুলনায় তো ভাল আছে।
আমরা সামান্য সর্দ জ্বর হলে,সামান্য পেরেশান হলে আমরা আল্লাহর না-শুকরি করি।সেটা উচিৎ নয়। বরং সদা সবর্দা আল্লাহর প্রশংসা করতে হবে।

এক লোক মসজিদের মধ্যে নামাজ পড়তে গেয়ে সে যখন মসজিদ থেকে বের হলো,দেখতে পেল তার জুতা চুরি হয়ে গিয়েছে। সে খুবই পেরেশান হয়ে মসজিদ থেকে খালি পায়ে প্রচন্ড গরম চলে যাচ্ছিল,সে খুবই পেরেশান কিন্তু কিছু দুর গিয়ে সে দেখলো এক লোক সেও মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার দুটি পা নেই। তখন সে শুকরিয়া আদায় করলো,আল্লাহর প্রশংসা করলো,যে আমারতো দুটি পা আছে কিন্তু এ লোকটির তো দুটি পা ও নেই।

সেজন্য আমরা সব সময় আমাদের চাইতে যে কষ্টে আছে,যে দু:খে আছে,যে পেরেশানীতে আছে,তার কথা যদি আমরা খেয়াল করি তাদের তুলনায় আল্লাহ আমাদেরকে সুস্থ্য রেখেছেন ভাল রেখেছেন। সে কথা যদি আপনি খেয়াল করেন তাহলে,আপনার সকল দু:খ পেরেশানী দুর হয়ে যাবে।এবং আপনি বলতে পারবেন : আলহামদুলিল্লাহ্।হাদিস শরীফে আছে যে সন্তুষ্ট চিত্তে আলহামদুলিল্লাহ্ বলে কেয়ামতের দিন দুটি পাল্লা নেকী দ্বারা ভরে দেয়া হবে।

(৩) সুবহান আল্লাহি ওয়া বিহামদীহি সুবহান আল্লাহিল আজিম : আমলটি খুব ছোট কিন্তু এর দ্বারাও নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে।
এ দুটি কালিমা আল্লাহর খুব প্রিয়,জিহ্বার জন্য,মুখে উচ্চারনের জন্য এটি খুবই হালকা।কিন্তু মিজানের পাল্লায় এটি খুবই ভারী তা হলো:সুবহান আল্লাহি ওয়া বিহামদীহি সুবহান আল্লাহিল আজিম। খুব বেশী বেশী এই জিকিরটি করতে থাকুন তা আপনার নেকীর পাল্লাকে ভারী করে দেবে।

(৪) সৎচরিত্র : রাসুল (সা:) এরশাদ করেছেন,সৎচরিত্র কেয়ামতের দিন সবচেয়ে ভারী আমল হবে। আমাদের প্রিয় নবী (সা:) সৎচরিত্রের তিনটি সুত্র বলেছেন।
সৎ চরিত্রে সুত্র হলো:
ক.হালাল তালাশ করা,
খ.হারাম থেকে বেঁচে থাকা,
গ.ঘরের লোকদের প্রতি উদার হওয়া:আপনি ঘরের লোকদের জন্য খরচ করাতে,তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে,কাপড় চোপড়ের ব্যাপারে,তাদের যেকোন প্রয়োজনের ব্যাপারে,হালাল প্রয়োজনের ব্যাপারে উদার হওয়া।মুক্ত হস্তে তাদের জন্য খরচ করা।
এই তিন টি সুত্র আপনি মনে রাখবেন, তাহলে আপনি সৎচরিত্রবান হিসাবে গন্য হবেন। এবং এই আমলটি আপনার মিজানের পাল্লাকে ভরিয়ে দেবে।

(৫)রাসুল (সা:) বলেন,অনেক বড় সফল ঐ ব্যাক্তি, যার মধ্যে পাচঁটি জিনিস এসে গেছে,যা তার নেকীর পাল্লাকে ভরিয়ে দেবে:
১. লা ইলাহা ইল্লাহ,
২.সুবহানআল্লাহ,
৩.আলহামদুলিল্লাহ,
৪.আল্লাহু আকবার,
৫.যার নেককার একজন সন্তান মৃত্যু বরন করেছে এবং সে ধৈর্য্য ধারণ করেছে।
-এটা এত বড় আমল যে সে জান্নাতে চলে যাবে।

(৬) যে ব্যাক্তি নিজের মু’মিন ভাই বোনদের জন্য দো’য়া করেন/অর্থাৎ অন্যদের জন্য দো’য়া করবেন:আমরা শুধু নিজের জন্য দো’য়া করি,কিন্তু যে ব্যাক্তি অপরের জন্য দো’য়া করবেন-তার নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে।নবী করিম (সা:) বলেন:”যে ব্যাক্তি শুধু এতটুকু বলবে, আল্লাহুম মাগফিরলীল মু’মীনিন ওয়াল মুমিনাত-হে আল্লাহ , তুমি মুমিন নরনারীদের ক্ষমা করে দাও-তার নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে।”এবং এই আমলটি তার নেকীর পাল্লাকে ভারী করে দেবে-যা তার জান্নাতে যাওয়ার জন্য সহায়ক হবে।

(৭) জানাযায় অংশ গ্রহণ করা: নবী করিম (সা:) এরশাদ করেন,”যে জানাজায় অংশ গ্রহণ করে,তার আমল নামায় ওহুদ পাড়ারের সমপরিমান নেকী দেয়া হয়।আর যে জানাজার পরে দাফন সহ সেখানে অবস্থান করে,দাফন কার্য্য সম্পন্ন করে আসে তার জন্য দুইটা ওহুদ পাহাড়ের সমপরিমান নেকী দেয়া হয়।”
আপনারা কি জানেন ওহুদ পাহাড়ের ওজন কতটুকু ? এটা হিসাব করা সম্ভব নয়।
মানুষকে দেখানো নিয়তে নয়,আপনার কোন আত্নীয় মারা গেছে,আপনি যদি না যান তাহলে ঐ আত্নীয়ের লোকজন আপনার উপর রাগ করবেন আপনার সাথে মনোমালিন্য হবে।তাদেরকে খুশী করার জন্য এই নিয়তে নয়,বরং আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনকে সন্তুষ্ট করার জন্য যদি আপনি জানাযায় অংশ গ্রহণ করেন,তাহলে আপনার নেকীর পাল্লা ভরে যাবে।

(৮) যে ব্যাক্তি একটি খেজুরের সমান সদ্কা করা : যে ব্যাক্তি একটি খেজুরের সমপরিমান সদকা করবে,আল্লাহ সে সদকাকে লালন পালন করতে করতে পাহাড়ের সমান করে দেবেন।কেয়ামতের দিন সে নেকীর পাহাড় যখন,তার কাছে নিয়ে আসা হবে,সে আশ্চার্য হয়ে যাবে। সে বলবে, ইয়া রাব্বুল আ’লামিন এটাতো আমার সদকা নয়,আমিতো এত সদকা করি নাই।তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলবেন,হে বান্দা, তোমার মনে আছে ? ছোট একটা খেজুর সদকা করেছ। সেই ছোট্র খেজুরটাকে লালন পালন করতে করতে আজ আমি পাহাড় সমান করেছি।এটা তোমারই সদকা আমি লালন পালন করে এত বড় করেছি। সুতরাং আল্লাহর রাস্তায় একটা খেজুরও যদি খরচ করেন সেটা আপনার নেকীর পাল্লাকে পাহাড় সমান ভারী করে দেবে।

(৯) আল্লাহর পক্ষে রাগ করা : রাগ দু’প্রকার:নিজের জন্য রাগ এবং আল্লাহর পক্ষে রাগ। আজ কাল আমাদের নিজের জন্য মনের মধ্যে রাগ আসে। আল্লাহর পেক্ষে রাগ আসে না। যেমন আপনার সন্তান স্কুলের পড়া রেডি করে নাই বা ঘরের দরকারী কোন বস্তু নষ্ট করে ফেলেছে।আপনি তখন রাগান্বিত হয়ে যান:রাগ করে,বকা দেন,মারেন। আপনার সন্তান যদি স্কুলে বা কোচিং এ যেতে না চায় আপনার রাগ লাগে।পড়া লেখা না করলে আপনার রাগ লাগে।কিন্তু আপনার সন্তান যদি নামাজ না পড়ে তাতে আপনার একটুও রাগ আসে না। অথচ আপনার আমার উচিৎ হলো,আল্লাহর হক নষ্ট করলে তাতে বেশী রাগ আসা।যদি এমন হয়,আল্লাহর পক্ষে রাগ করা হয়,তাহলে আখেরাতে নেকীর পাল্লা ভরে যাবে।

(১০) দ্বীনের দাওয়াত: রাসুল (সা): এর দ্বীন ধর্মের দাওয়াতকে প্রচার করা বিস্তার করা,যা কেয়ামতের দিন নেকীর পাল্লাকে ভরিয়ে দেবে।

আসুন,এসব আমল আমরা নিজেরা করি এবং অন্যরাও যেন করতে পারে,সবাইকে জানিয়ে দিয়ে নেকীর পাল্লাকে ভারী করি-অমিন।

রিজিক-রুজি-রোজগার নিয়ে যত টেনশন তার ১০০০ ভাগের ১ ভাগ টেনশনও যদি আল্লাহ ভয়ে ভীত হয়ে মানুষ করতো,তবে এক এক জন অলি আল্লাহ হয়ে যেত। রিজিকের টেনশন দুর করার আমল।

বড়ই আফসোসের বিষয় হলো রিজিকের জন্য বর্তমান যুগে যতবেশী মানুষ রাতদিন পেরেশানীতে আছে বিগত কোন যুগে কোন জামানায় এমনটি ছিল না। আল্লাহ তা’য়ালা প্রত্যেক প্রানীর রিজিকের জিম্মাদার তবুও মানুষ এই রিজিকের পিছনে সবচেয়ে বেশী সময় ব্যায় করে।এই রিজিকের জন্য আল্লাহর হক ভুলে যায়। আল্লাহর এবাদত ভুলে যায়।মানুষের হক ভুলে যায়।যত ধরনের অপরাধ আছে তা করতে দ্বিধা বোধ করে না।অধৈর্য্য হয়ে এই রিজিকের জন্য সব ধরনের হারাম পন্থা অবলম্বন করে।দারিদ্রতাকে মানুষ যেভাবে ভয় পায়,টাকা পয়সা হাতছাড়া হয়ে যাবে,গরীব হয়ে যাবে এই ভয় মানুষকে যেভাবে আতংকিত করে,তার হাজার ভাগের যদি একভাগও মানুষ আল্লাহকে ভয় পেত,আল্লাহকে ভয় করতো তাহলে এক এক জন আল্লাহর অলি হয়ে যেত।
এক সাহাবীর মাধ্যমে বিশ্বনবী (সা:) এর নব্যুয়তীর জবান থেকে এই দো’য়াটি পাওয়া যায়। এই দো’য়াটির আমল করলে আপনার কাছে এত বেশী রিজিক আসবে,কোথায় রাখবেন দিশা পাবেন না।
এবার আসুন,হাদিসটি শুনি এবং দোয়াটি মুখস্ত করে ফেলি। একজন সাহাবী রাসুল (সা:) এর কাছে এসে বললেন ”ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা:) দুনিয়া আমার প্রতি পৃষ্ট প্রদর্শণ করেছে,
তখন নবী করিম (সা:) বললেন,তোমার কি ঐ তাসবীহ স্মরণ নেই যে তাসবীহ ফেরেশতা এবং মাখলুকের, যার বরকরে রুজি রোজগার প্রদান করা হয়।যখন সুবেহ সাদিক উদিত হয়, তখন এই তসবিহটি এই দোয়াটি ১০০ বার পাঠ করবে।:-
সুবহান আল্লাহি ওয়া বিহামদীহি, সুবহান আল্লাহিল আজিম,আসতাগফিরুল্লাহ,
-দুনিয়া তোমার নিকট অপমানিত হয়ে চলে আসবে।” (আল হাসাইসুল কোবরা ২য় খন্ড ২৯৯ পৃষ্ঠা)।
ঐ সাহাবী চলে গেলেন,কিছুদিন পুনরায় হাজির হয়ে আরজ করলেন,ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা:) দুনিয়া আমার নিকট এত বেশী আসছে আমি হতবাক কোথায় লুটাবো-কোথায় রাখবো আমি দিশা পাচ্ছি না।
বি:দ্র:পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামাজ) আদায় করতে হবে।

সঠিক উচ্চারনে সালাম প্রদান না করলে অর্থ ভিন্ন হয়ে যায় এবং গুনাহ হয়।

ইসলামী অভিবাদন হলো اسلام عليكم বলা। বাংলা উচ্চারণ হলো “আসসালামু ‘আলাইকুম”। এর অর্থ “আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।”
সালাম হলো ঈমানের অঙ্গ এবং জান্নাতে প্রবেশের একটি রাস্তা।
একজন মুসলমান অন্য একজন মুসলমানের সাথে সাক্ষাৎ করলে সালাম দিয়েই কথোপকথন শুরু করেন। তবে অত্যান্ত দুঃখজনক ব্যাপার হল বেখেয়ালে বা তাড়াহুড়া করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা সঠিক উচ্চারণে সালাম দেইনা।
আমরা প্রতিদিন অনেককে এমনভাবে সালাম দিতে শুনি: স্লামালাইকুম, সালামালাইকুম, আস্লামালাইকুম, আস্লাআলাইকুম, সেলামালাইকুম, ইস্লামালাইকুম, অয়ালাইকুম।
আবার উত্তর দেওয়ার সময়ও ভুলভাবে উত্তর দিতে শুনি: অলাইকুম সালাম, অলাইকুম আসসালাম, অলাইকুম ইত্যাদি।
ইসলামের শেআর ও প্রতীক পর্যায়ের একটি আমল হচ্ছে সালাম। এটি একটি দুআ। আর তাই এর সহীহ উচ্চারণের ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া বেশ জরুরী। বিশুদ্ধ উচ্চারণ না হলে অনেক সময় কথার অর্থ বদলে যায়। আর তাই, সঠিক অর্থ বজায় রাখতে বিশুদ্ধ উচ্চারণ আবশ্যক।
সালাম বিষয়ে ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত,হুজুর ( সা.) এর দরবারে এক লোক এসে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে বসে পড়ল। হুজুর ( সা.) তার উত্তর দিয়ে বললেন, সে দশটি নেকি পেয়েছে। তারপর আরেকজন এসে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বলে বসে গেল। হুজুর ( সা.) তার উত্তর দিয়ে বললেন, সে বিশটি নেকি পেয়েছে। অতঃপর আরেকজন লোক এসে ‘আসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’ পর্যন্ত বলে বসে গেল। রাসূল(সা.) তার উত্তর দিয়ে বললেন, সে ত্রিশ নেকি পেয়েছে। –আবু দাউদ ৫১৯৫, তিরমিজি ২৬৯০
সালামের জবাব উত্তম অথবা একইরকম জবাব দেওয়া:
=======================================
আল্লাহ আমাদের আদেশ করেছেন অভিবাদনের জবাব যেন তার চেয়ে সুন্দরভাবে অথবা সমান পরিমাণে দেই। তিনি বলেন,
“যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয়, তোমরাও অভিবাদন জানাও তারচেয়ে উত্তমভাবে অথবা তারই মতো করে ফিরিয়ে দাও।” [সূরা নিসা (৪):৮৬]
বেশিরভাগ আলেমগণের মতে
“আসসালামু ‘আলাইকুম” এর জবাবে বলা উচিত “ওয়া’আলাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ”।
“আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ”র জবাবে বলতে হবে “ওয়া’আলাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু”।
“আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু”র জবাবে এর চেয়ে উচ্চস্বরে ও আনন্দিত স্বরে বলতে হবে “ওয়া’আলাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু”।
সর্বোপরি অপর মুসলিম ভাইকে সালাম দেওয়া আমাদের দায়িত্ব আর সালামের জবাব দেওয়া আমাদের উপর তাদের অধিকার।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের পাঁচটি অধিকার রয়েছে। সালামের জবাব দেওয়া, অসুস্থকে দেখতে যাওয়া, জানাযার সাথে শরিক হওয়া, দাওয়াত কবুল করা ও হাঁচি দিলে আলহামদুলিল্লাহ বলা।” (রিয়াদ্বুস সলিহীন, ৭ম খণ্ড)
মোটকথা হলো, সালাম ইসলামের একটি চিহ্ন এবং এটি মুসলিমদের মধ্যকার ভ্রাতৃত্বকে মজবুত করে। আসুন সালামের আদবসমূহ ঠিক রাখার মাধ্যমে এর সর্বোচ্চ ফযিলত আদায় করে নেই।

ছোট্ট একটি তাসবিহ কিন্তু সাওয়াব-ফজিলত অনেক বেশি।

উম্মত জননী হজরত জুওয়াইরিয়া (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন আল্লাহর নবী (সা.) ফজরের সময় আমার ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। তখন আমি জায়নামাজে ছিলাম। ত...